সিরাজগঞ্জে বন্যা ভাগ্য উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যমুনা পাড়ের লাখো
মানুষের। প্রতিবছর বন্যার কারণে শতশত পরিবারের বসতভিটা-ফসলি জমি যমুনা
গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। এসব পরিবার আর ঘুরে দাঁড়াতে
পারছে না।
আবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য প্রয়োজন হয়
অর্থের। আর সেই অর্থ জোগান দিতে করতে হচ্ছে ধার-দেনা, নিতে হচ্ছে এনজিও বা
ব্যক্তির কাছ থেকে সুদের ওপর টাকা। সুদের ঘানি এক বছর টানতে না টানতেই আবার
বন্যায় ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। এতে বন্যা কবলিত নিম্ন আয়ের মানুষের
ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
এ ছাড়া ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকদেরও প্রতিবছর ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। ক্ষতি
পুষিয়ে নিতে তাদেরও লেগে যায় বছর। এভাবে বছরের পর বছর সুদের ঘানি আর দুমুঠো
খেয়ে পড়ে চলছে বন্যাকবলিতদের জীবন। জীবনমানের পরিবর্তন হচ্ছে না কখনো। এ
অবস্থায় বন্যা কবলিতরা ঘর মেরামতে আর্থিক সহায়তা ও নদী ভাঙনে নিঃস্ব
পরিবারগুলো পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, চলতি বছর যমুনা নদীর পানি চার ধাপে বৃদ্ধি পায়। এখনো যমুনা
নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বন্যা স্থায়ী হয়েছে প্রায় আড়াই মাস।
দীর্ঘ বন্যার কারণে জেলার প্রায় লক্ষাধিক বসতভিটা পানির নিচে থাকায় নিচের
অংশ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
পানির তোড়ে কারও ঘর ভেঙে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে আসবাপত্র, পায়খান ও
টিউবওয়েলসহ নানা সরঞ্জামাদি। এতে পরিবার প্রতি প্রায় ২০-৩০ হাজার টাকার
ক্ষতি হয়েছে। আর দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১৫
হাজার হেক্টর জমির পাট, সবজি ও কাউনসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে
কৃষকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে চৌহালীর বাঘুটিয়া ইউপির ঘুসুরিয়া, চর বিনানুই, হিজুলিয়ার চর,
চর সলিমাবাদে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ভাঙনে বসতভিটা-ফসলি জমি
বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে এক সময়ের সম্পদশালী পরিবার মুহূর্তেই ফকির হয়ে
যাচ্ছে। এছাড়াও বন্যায় রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি
হয়েছে। ক্ষতির কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না তাঁত শিল্পে জড়িত ব্যবসায়ীরা।
চরমালসাপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম ও বাদশা জানান, এ বছর বন্যা সবচেয়ে
বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। বসতভিটার অবস্থা খুবই করুণ। মেরামত করার মতো
সামর্থ্য নেই। মেরামত করতে হলে সুদের ওপর টাকা নিয়ে করতে হবে। সুদ টানা আর
পরিবারের খাবার যোগানো খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। প্রতিবছর এভাবেই কষ্ট করতে
হয়। যে কারণে আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না।
কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ বছর ৬০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে প্রায় ৭
লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটি পূরণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
ভাঙন কবলিত ঘুসুরিয়া এলাকার হালিম, আব্দুর রাজ্জাক, আনিছুর রহমান ও
গোলাম সরোয়ার জানান, নদী ভাঙনের কারণে বসতভিটা ও ফসলি জমি বিলীন হওয়ায় তারা
একেবারে সহায়-সম্বলহীন হয়ে যাচ্ছেন। যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তাতে আগামী ২০
বছরেও তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না।
সিরাজগঞ্জ জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান,
বন্যায় ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বরাদ্দ পাওয়া গেলে বিতরণ করা হবে।