মাদারীপুরে
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য সন্ধ্যা ৭টার পর ইয়াং ছেলে–মেয়ে ও শিক্ষার্থীরা
বাইরে থাকতে পারবে না
মোঃ রনি আহমেদ রাজু ক্রাইম রিপোর্টার
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায়
বক্তব্য রাখছেন জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায়
বক্তব্য রাখছেন জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়প্রথম
আলো
সন্ধ্যার পর কোনো ইয়াং ছেলে-মেয়ে ও শিক্ষার্থীরা বাড়ির বাইরে যেতে পারবে
না।
যদি প্রয়োজন হয় তাহলে অভিভাবক নিয়ে বাইরে যাবে। এ ছাড়া শহর ও গ্রামের
চায়ের দোকানগুলোয় টেলিভিশন থাকা চলবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে
শহর-গ্রামের দোকান বন্ধ করতে হবে।গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিবচর উপজেলা
পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি)
রহিমা খাতুন এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা ও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা
কিছু সিদ্ধান্ত হাতে নিয়েছি। এ ছাড়াও গত মাসে আইনশৃঙ্খলা সভায় নারী
নির্যাতন, কিশোর গ্যাংসহ জেলার নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ওই আলোচনায় আমরা
সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অভিভাবক ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী সন্ধ্যা সাতটার পর বাইরে
থাকতে পারবে না।’
দোকানের টেলিভিশনের কারনে আড্ডা বেশি হয়। এতে যারা শিক্ষার্থী, তারা
পড়াশোনা করে না। আর যারা পড়াশোনা করে না, কৃষক বা কাজ করে, তারা অনেক সময়
ধরে এখানে অলস সময় কাটায়। ফলে তার পরিবারে কী হচ্ছে, তার ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা
করছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখে না। এ কারণে চায়ের দোকানে টেলিভিশন রাখা
যাবে না।
শহর ও গ্রামের চায়ের দোকানগুলোয় টেলিভিশন না রাখার বিষয়ে জেলা প্রশাসক
বলেন, ‘চায়ের দোকানগুলোয় সাধারণত মুরব্বি ও ইয়াংরা বসে। ইয়াংদের একশ্রেণির
বয়স ১৮ বছরের নিচে। তারা দোকানে বসে চা খায়, আড্ডা দেয় এবং টিভি দেখে। এই
টিভি দেখা চলে অনেক রাত পর্যন্ত। দোকানের এই টেলিভিশনের কারনে আড্ডা বেশি
হয়। এতে যারা শিক্ষার্থী, তারা পড়াশোনা করে না। আর যারা পড়াশোনা করে না,
কৃষক বা কাজ করে, তারা অনেক সময় ধরে এখানে অলস সময় কাটায়। ফলে তার পরিবারে
কী হচ্ছে, তার ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখে না। এ
কারণে চায়ের দোকানে টেলিভিশন রাখা যাবে না।’
রহিমা খাতুন আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের এখন আর্থিক অবস্থা এতটাই ভালো যে
প্রতিটি ঘরেই এখন টেলিভিশন আছে। বাইরে ও চায়ের দোকানে গিয়ে টেলিভিশন দেখা
বা খেলা দেখার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। আবার টেলিভিশন দেখার নামে ক্রিকেট খেলা
নিয়ে জুয়াও খেলে। এ ছাড়াও সন্ধ্যা নামলেই ব্রিজ-কালভার্টগুলোর আশপাশে দেখা
যায়, মুঠোফোনে লুডু খেলা নিয়েও জুয়া চলে, যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব বন্ধ
করতে হবে।
বৃহস্পতিবার থেকে আমরা মাইকিং করব। এ বিষয়ে আমরা প্রথম কয়েক দিন
প্রচার–প্রচারণা চালাব। জনগণকে সচেতন করব। তারপরও যদি ইয়াং ছেলে-মেয়ে ও
শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পরে বিনা কারণে বাইরে আড্ডা দেয়, তাহলে আমরা অভিযানে
যাব। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সহযোগিতা
নিয়ে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করব।
রহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক, মাদারীপুর
দোকানপাট বন্ধের সময় নির্ধারণ নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, পৌরসভার মধ্যে রাত
১০টা আর পৌরসভার বাইরে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। এরপর সব
দোকানপাট বন্ধ রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন দেশে এখন যুবশক্তি সবচেয়ে বেশি। তাই যুবকদের প্রতি
যত্নশীল হতে হবে। আর এখন যত্নশীল না হলে এই যুবশক্তিই দেশের জন্য বিপদ। তাই
যেকোনো মূল্যে যুবশক্তিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজ বুধবার সন্ধ্যায় মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা
খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে আমরা মাইকিং করব যেন অভিভাবক
ছাড়া সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে ইয়াং ছেলে-মেয়ে ও শিক্ষার্থীরা বাইরে না যায়। এ
বিষয়ে আমরা প্রথম কয়েক দিন প্রচার–প্রচারণা চালাব। জনগণকে সচেতন করব।
তারপরও যদি ইয়াং ছেলে-মেয়ে ও শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পরেবিনা কারণে বাইরে
আড্ডা দেয়, তাহলে আমরা অভিযানে যাব। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা পুলিশ ও
অন্যান্য বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করব।
রহিমা খাতুন আরও বলেন, ‘আমি মাঝেমধ্যেই রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায়
পরিদর্শনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি ইয়াং ছেলেরা মুঠোফোনে জুয়া খেলে, পড়ালেখা
বাদ দিয়ে আড্ডা দেয়। এভাবেই তারা একপর্যায়ে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। জেলার
সব তরুণ, যুবক ও শিক্ষার্থীদের ভালোর দিকে এগিয়ে নিতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’