প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি আনোয়ার হোসেন জনি এখন
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের চিফ রাইটার।
গুরুত্বপূর্ণ ওই পদে পুরাতন ও বিশ্বস্ত কয়েদিদের নিয়োজিত করা হলেও অজানা
কারণে এইপদে নিয়োগ পান জনি। এর পর থেকেই কারাগারে আধিপত্য বিস্তারসহ নানা
সুযোগ সুবিধা নিতে শুরু করেছে কারাগারে থাকা বিএনপি’র বিভিন্ন নেতাকর্মীসহ
বিভিন্ন ধরনের কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা।
সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে ১৯৯৪ সালের ২৩
সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার খুলনা থেকে সৈয়দপুর
পর্যন্ত ট্রেন মার্চ কর্মসূচি ছিল। শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী
স্টেশনে পৌঁছলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার বগি লক্ষ্য করে
উপর্যুপরি বোমা নিক্ষেপ করে ও গুলিবর্ষণ করে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।
ওইদিন রাতে ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ওসি নজরুল ইসলাম শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে
একটি মামলা করেন।
১৯৯৬
সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ঈশ্বরদীতে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকৃত ট্রেনের
বগিতে বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণ করে হত্যাচেষ্টা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়।
এদিকে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক
মো. রোস্তুম আলী ২০১৯ সালের ৩ জুলাই স্পর্শকাতর এই মামলার চার্জশিটভুক্ত
৫২ আসামির মধ্যে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছর
করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন। আনোয়ার হোসেন জনির এই মামলায় ১০ বছর সশ্রম
কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণার কয়েকদিন পরেই জনিসহ দণ্ডপ্রাপ্তদের পাবনা জেলা
কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। সম্প্রতি
সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি আনোয়ার হোসেন জনিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের চিফ
রাইটার করা হয়েছে এবং একই মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আরও কয়েজন কয়েদিকে বিভিন্ন
সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রাজশাহী কারাগারে রাখার অভিযোগ উঠেছে কারা কতৃপক্ষের
বিরুদ্ধে। অপরদিকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীকেও অনিয়ম করে কারা
হাসপাতালে সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে জানাযায়।
অন্যদিকে পাবনার
ঈশ্বরদীর বিএনপি নেতা ও নিজের মুক্তিযোদ্ধা মামলাসহ একাধিক হত্যা মামলার
আসামি, কুখ্যাত সন্ত্রাসী তুহিন চেয়ারম্যান রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে
আছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা এই তুহিন এখন রাজশাহী
কারা হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজের দলের ও পছন্দের
লোকজনকে তিনি হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করেন।
কারাগারের চিফ রাইটারের
দায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ পরীক্ষিত কয়েদি ছাড়া কাউকে এই পদে দেয়ার
নিয়ম নেই। চিফ রাইটার কারাগারে আসামি ও কয়েদিদের অপরাধের অভ্যন্তরীণ
বিচার, তাদের শৃঙ্খলা ও সুযোগ-সুবিধা দেখাশোনা ছাড়াও বাড়তি আয় উপার্জনের
বেশ সুযোগ আছে। পাশাপাশি চিফ রাইটার কারাগারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা
নিশ্চিতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। তাই বর্তমান আ’লীগ সরকারের সময়ে
হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিকে কোন ক্ষমতা বলে এমন একটি গুরুত্ব পদে বসানো
হয়েছে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে ।
এবিষয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের
জেলার মো. তারেক কামাল বলেন, কয়েকদিন আগে আনোয়ার হোসেন জনিকে চিফ রাইটার
করা হয়েছে। সে কেস টেবিলে (আসামি-কয়েদিদের বিচার) কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে।
সে কয়েদি বলেই এই দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে অভিযোগ উঠলে তাকে বাদ
দেয়া হবে।