শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রাস্তার কাজ না করে টাকা ভাগাভাগি( সওজ) ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে রূপগঞ্জে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্বজনদের সংবাদ সম্মেলন মাগুরা গোপালগ্রাম ইউনিয়ন কৃষকদলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এ্যাডভোকেট মিথুন রায় চৌধুরী পটুয়াখালী ভার্সিটির, পোস্টগ্রাজুয়েট স্ট্যাডিজ কমিটির সভা।। দুস্থ ও অসহায় মানুষের ভরসা যেন ঝর্ণা মান্নান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট সাপাহারে জোর পূর্বক লক্ষাধিক টাকার মাছ উত্তোলন পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায়, মসজিদের ইমামের গরু লুট।। দুমকি উপজেলায়, গরু লুঠ মামলার ২ আসামি আটক শ্রীনগর থানা থেকে যুবদল নেতাকে ছিনিয়ে নিলো বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নওগাঁর মান্দায় ভূমিহীন কৃষকদের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ
Headline
Wellcome to our website...
ধর্ষণ যে এখন একটি পেশা সমাজের জন্য
/ ২ Time View
আপডেট : শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৬:৫৬ পূর্বাহ্ন

 

ভুক্তভোগীদের ৪৫% শিশু–কিশোরী

সাত বছরের শিশুটিকে বাসায় রেখে তার মা–বাবা প্রতিদিন সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। বাবা প্লাস্টিকের কারখানায় আর মা একটি স্কুলে আয়ার কাজ করেন। রাজধানীর লালবাগ এলাকায় টিনের ছাউনির ছোট্ট ঘরে একাই সময় কাটে তার।

শিশুটির নানি তাদের বাসার কাছেই থাকেন। কাজের ফাঁকে তিনিও নাতনির খোঁজ নেন। গত ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে নানি এসে দেখতে পান বাসার দরজা বন্ধ। তিনি বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করার পর দরজা খুলে শিশুটির এক প্রতিবেশী বেরিয়ে যান। নানি ভেতরে ঢুকে দেখেন, শিশুটি ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে, থেমে থেমে কাঁদছে। কী ঘটেছে তা বুঝতে সময় লাগেনি নানির। দ্রুত শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে (ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) নিয়ে যান স্বজনেরা। পরে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে লালবাগ থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। পুলিশ অবশ্য দ্রুতই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।উচ্চবিত্ত
পরিবারের সদস্যরা ধর্ষণের মতো অপরাধের শিকার হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে
মামলা-মোকদ্দমায় যেতে চায় না। গরিব মানুষ থানায় ও আদালতে মামলা করে। তবে
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করলেও শেষ পর্যন্ত চাপে
পড়ে আপস করে ফেলে। এর ফলে অপরাধীর শাস্তি হয় না, ধর্ষণের ঘটনাও থামে

নেহাল করিম, অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিশুটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, কাজের জন্য তাঁরা স্বামী–স্ত্রী সব সময় বাইরে থাকেন। এই সুযোগই নিয়েছে প্রতিবেশী রজ্জব তালুকদার। তার মেয়ে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, চিকিৎসার পর তার মেয়ে শারীরিকভাবে এখন অনেকটাই সুস্থ। কিন্তু যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি কীভাবে পূরণ হবে? তিনি আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের ৪৫% শিশু–কিশোরী

ধর্ষণের এ ঘটনাসহ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত ১০ মাসে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় রাজধানীর ৫০টি থানায় মামলা হয়েছে ৫২৫টি। এর মধ্যে শিশু-কিশোরী ধর্ষণের মামলা প্রায় অর্ধেক (২৩৫টি)। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের ৪৫ শতাংশই শিশু–কিশোরী, যাদের বয়স ৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। মোট ৫২৫টি মামলার মধ্যে ১৮৬টি মামলার নথি পর্যালোচনা করেছে প্রথম আলো।

এসব মামলার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের একটি বড় অংশকে প্রতারিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বিয়ের আশ্বাস ও প্রেমের ফাঁদে ফেলা (ধর্ষণ ও দলবদ্ধ শিকার) হয়েছে ৬৪ শতাংশ নারীকে। ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশু–কিশোরী ও নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের ক্ষেত্রেও একটি মিল পাওয়া যায়। বেশির ভাগ ধর্ষণের ঘটনাতেই ভুক্তভোগী এবং আসামি উভয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ।প্রথম
আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের ৪৫ শতাংশই শিশু–কিশোরী, যাদের
বয়স ৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। মোট ৫২৫টি মামলার মধ্যে ১৮৬টি মামলার নথি
পর্যালোচনা করেছে প্রথম আলো।

অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য নিয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সাবেক ও বর্তমান পাঁচজন সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।

তাঁরাও নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন, ঢাকায় যারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তাদের বড় অংশই শিশু–কিশোরী এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্য। আবার ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত আসামিদেরও বড় অংশই দরিদ্র।পাঁচজন সরকারি কৌঁসুলির এমন অভিমতকে সঠিক বলেই মনে করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার।

দীর্ঘদিন ধরে আদালতে ধর্ষণের শিকার নারীদের পক্ষে আইনি সহায়তা দিয়ে আসা এই আইনজীবী প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিকভাবে যাদের অবস্থান সুসংহত নয়, তাদের নানা ধরনের ফাঁদে ফেলা হয়। গরিব পরিবারের একটি শিশুকে চকলেট, আইসক্রিম বা টাকার লোভ দেখিয়ে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করে নিতে পারে ধর্ষকেরা। আবার ওই সব লোকজন তাদের পরিচিত হয় বা আশপাশেই বসবাস করে।

ভুক্তভোগীদের ৪৫% শিশু–কিশোরী

এর আগে ২০১৮ সালে প্রথম আলোর দীর্ঘ অনুসন্ধানেও একই তথ্য উঠে আসে। তখন প্রথম আলো ধর্ষণসংক্রান্ত ৫২টি মামলা খুঁটিয়ে দেখে। এর মধ্যে ৪৬টি মামলার ভুক্তভোগী নারীরা ছিলেন দরিদ্র পরিবারের, ছিন্নমূল, বস্তিবাসী, গৃহকর্মী, শ্রমজীবী বা পোশাকশ্রমিক। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণসহ ছয় ধরনের অপরাধে করা মামলা নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত মোট ছয়টি পর্বে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। ওই অনুসন্ধানেই উঠে আসে ৯৭ শতাংশ মামলায় আসামিদের সাজা হয় না।বেশির
ভাগ ক্ষেত্রে আশপাশের মানুষেরাই ধর্ষণের ঘটনার জন্য দায়ী। নিম্ন আয়ের
শ্রমজীবী মা–বাবারা যখন কাজে বেরিয়ে পড়েন, তখন তাঁদের সন্তানেরা ঝুঁকিতে
থাকে।এম এ বারী, পিপি,নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল

এক যুগের বেশি সময় ধরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পিপির দায়িত্ব পালন করছেন এম এ বারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আশপাশের মানুষেরাই ধর্ষণের ঘটনার জন্য দায়ী। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মা–বাবারা যখন কাজে বেরিয়ে পড়েন, তখন তাঁদের সন্তানেরা ঝুঁকিতে থাকে।করোনায় সাধারণ ছুটির ৬৬ দিনে মামলা কম গত ৬ মার্চ রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী একটি শিশু (৭) ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটির মা পিঠা বিক্রি করে সংসার চালান। ৬ মার্চ বিকেলে পিঠা বিক্রির জন্য তিনি বাইরে যান। রাত ১০টায় ফিরে দেখেন ঘরে মেয়ে নেই। আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় মেয়েকে খুঁজতে থাকেন।পরে কামরাঙ্গীরচরে ইসলামনগরে একটি ভাঙারি দোকানের পাশে মেয়েকে খুঁজে পান তিনি। শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামির বয়স ৪০ বছর। এই আসামি এখন কারাগারে রয়েছেন।

কামরাঙ্গীরচরেই গত ১৮ অক্টোবর ১২ বছর বয়সী এক শিশু দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামিদের মধ্যে চারজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা গত ২০ অক্টোবর অপরাধ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page