রমজান না আসতেই পেঁয়াজের দামে প্যাঁচ
হঠাৎ
করেই রাজধানীর বাজারগুলোয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আড়ত, পাইকারি ও খুচরা
সর্বস্তরে বেড়েছে দাম। খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৫০ ছুঁয়েছে। গেল এক
সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ১৫ টাকা। রাজধানীর সবচেয়ে বড় আড়ত
শ্যামবাজারে একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে
বেড়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা। রাজধানীর শ্যামবাজারের আড়ত, যাত্রাবাড়ী পাইকারি
বাজার এবং কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
হঠাৎ করে
পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন
এফবিসিসিআই। অন্যদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, আমদানির অনুমতি না থাকায় আমদানি
করা যাচ্ছে না। এ কারণেই দাম বাড়তি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির সুযোগ দিলে
দেশের বাজারে দাম স্বাভাবিক হবে। আড়তদাররা বলছেন, ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে
নতুন পেঁয়াজ উঠলে বাজার স্বাভাবিক হবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়ত থেকে
বেশি দামে কেনায় খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে
হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে শিগগিরই আমদানিকারক ও
পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন বসবে বলে জানা গেছে।
শ্যামবাজারের
পেঁয়াজের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, ফরিদপুর অঞ্চলের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে
কেজিপ্রতি ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা দরে, যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা।
একদিনে বেড়েছে ২ টাকা। আবার মানভেদে কোনো কোনো পেঁয়াজে বেড়েছে ৫ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ টাকা। শ্যামবাজারের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সে
গিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। আড়তদার শহীদুর রহমান কাজল আমাদের সময়কে বলেন,
মাঠপর্যায়ে পেঁয়াজের সংকট থাকায় দাম বেড়েছে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে নতুন
পেঁয়াজ উঠলে বাজার স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যায়।
স্বাধীন
বাণিজ্যালয়ের আড়তদার বরুণ বর্মণ বলেন, আমদানি বন্ধ। বাজারে এখন দেশি
পেঁয়াজ। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, ফরিদপুরের
পেঁয়াজ ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি
হয়েছে। তিনি বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়েছে, নতুন হালি পেঁয়াজ
এখনো মাঠ থেকে না ওঠায় দাম কিছুটা বাড়তি। তবে পুরোপুরি পেঁয়াজ উঠলে দাম
কমবে।
তাজমহল বাণিজ্যালয়ের আড়তদার জয় সরকার বলেন, ফরিদপুরের পেঁয়াজ
৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল যা ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা দরে
বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে মেহেরপুর অঞ্চলের পেঁয়াজের মান কিছুটা খারাপ বলে ২৬
থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বিক্রি হয় ২৪ থেকে ২৫ টাকা দরে।
যাত্রাবাড়ী
পাইকারি বাজারের নোয়াখালী বাণিজ্যালয়ের মজিবুর রহমান জানান, দুই দিন ধরে
আড়তে দাম বেশি। তাই পাইকারি বাজারেও দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে
একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৪ টাকা বেড়েছে।
অন্যদিকে রাজধানীর খুচরা
বাজারে কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর আনন্দবাজার খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে দাম
বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে
তাদের কোনো হাত নেই।
এদিকে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ
জানতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান সাবেক বাণিজ্য সচিব মোফিজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন,
উৎপাদন বা সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকলে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বর্তমানে দাম বাড়ার কারণ বলতে পারছি না। বিষয়টি জানার জন্য শিগগিরই
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসব।
এদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন
এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ আমাদের সময়কে বলেন, হঠাৎ করে
পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখি না। দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।
তিনি বলেন, রমজানের আগে এমন করে দাম বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
হয়তো কৃত্রিম সংকটের অপচেষ্টা করবে অসাধু ব্যবসায়ীরা। যাতে করে আগের মতো
কোনো সিন্ডিকেট অথবা মজুদ করার নামে বাজার অস্থিরতার সৃষ্টি না হয়- এ জন্য
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এর কারণ খতিয়ে দেখা উচিত বলেও পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে
আমদানিকারক শঙ্কর চন্দ্র ঘোষ আমাদের সময়কে বলেন, দেশে এখন পেঁয়াজের আমদানি
নেই। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করার অনুমতি দিলে পেঁয়াজের দাম
অনেক কমে যাবে। বাজার স্বাভাবিক হবে। তবে রোজার সময় নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে
তেমন সংকট দেখা দেবে না বলে মনে করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত
বছর পেঁয়াজের সংকট থাকায় অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় তিক্ত অভিজ্ঞতা
থেকে কৃষকরা এবার প্রচুর পেঁয়াজ চাষ করেছেন। কোনো জমি ফেলে রাখা হয়নি।
চাহিদার অনেকাংশই দেশি চাষিরা পূরণ করতে পারবেন।
জানা গেছে, বিশেষ
করে দেশে মুড়িকাটা ও হালি জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। মুড়িকাটা পেঁয়াজ
অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাসজুড়ে বাজারে থাকে। এ জাতীয় পেঁয়াজ মজুদ করা যায় না।
অল্পতেই পচন ধরে। অন্যদিকে হালি পেঁয়াজ ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বাজারে আসে। এ
পেঁয়াজ ৬ থেকে ৯ মাস সংরক্ষণ করা যায়। পুরোপুরি হালি পেঁয়াজ বাজারে না আসায়
বাজারে দাম বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।