কাঠমান্ডু/ব্যাংকক/নয়া দিল্লি, ১৭ মার্চ ২০২১: জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদন
অনুযায়ী, কোভিড-১৯ এর ফলে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে অপরিহার্য জনস্বাস্থ্য
পরিষেবাগুলোর সহজলভ্যতা ও ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া ২০২০ সালে অতিরিক্ত
প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত প্রায় ১১ হাজার প্রসূতি মায়ের মৃত্যুও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার মাঝে এই অঞ্চলে ক্লিনিক এবং
অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচি স্থগিত হয়ে যায়। ২০২০ সালের শেষে দক্ষিণ
এশিয়ায় কোভিড-১৯ এর রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখে পৌঁছে যায়।
ইউনিসেফের দ্বারা কমিশন করা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সহযোগিতায় তৈরী করা প্রতিবেদন সেবা
গ্রহণ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আরও উদাহরণ তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে
নেপাল ও বাংলাদেশে মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদের চিকিৎসা গ্রহণের
হার প্রায় ৮০ শতাংশ কমে যাওয়া এবং পাকিস্তান ও ভারতে শিশুদের টিকাদান
তীব্রভাবে হ্রাস পাওয়া।
ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক জর্জ লারিয়া-অ্যাডজেই বলেন,
“এসব গুরুত্বপূর্ণ সেবা গ্রহণ ব্যাপক মাত্রায় কমে যাওয়ায় দরিদ্রতম
পরিবারগুলোর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। যে শিশু ও
মায়েদের জন্য এই পরিষেবাগুলো অত্যন্ত জরুরি তাদের জন্য এগুলো পুনরায়
পুরোমাত্রায় সচল করা অত্যাবশকীয় এবং একইসঙ্গে এই পরিষেবাগুলো গ্রহণে মানুষ
যাতে নিরাপদ বোধ করে তা নিশ্চিত করার জন্য সম্ভব সব কিছুই করতে হবে।”
প্রতিবেদনে গর্ভবতী নারী, কিশোর-কিশোরী এবং ছোট শিশুদের জন্য অপরিহার্য
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানানো
হয়েছে। টিকা এবং শিশুদের জন্য অপরিহার্য অন্যান্য ওষুধ সরবরাহ ও বিতরণ
ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাও গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপাল
সিং বলেন, “অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা বজায় রাখা ডব্লিউএইচওর কোভিড-১৯
মোকাবিলা কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই অঞ্চলের দেশগুলো অপরিহার্য
সেবা প্রদান অব্যাহত রাখা এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া সেবাগুলো পুনরায় চালু করার
প্রচেষ্টায় নজর দিচ্ছে, কারণ এসব সেবা ব্যহত হলে প্রতিরোধযোগ্য কারণে
মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াবে।”
অতিমারী নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৪২
কোটি শিশু বিদ্যালয়ের বাইরে রয়ে গেছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ৪৫
লাখ মেয়ের আর কখনো বিদ্যালয়ে ফেরা হবে না এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও
তথ্য সেবা প্রাপ্তির সুযোগ কমে আসায় তারা বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইউএনএফপিএর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক বিয়র্ন অ্যান্ডারসন বলেন,
“দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এসব
সেবাপ্রাপ্তি বন্ধ থাকায় বৈষম্য গভীর হচ্ছে এবং এটি প্রসূতি মায়ের ও নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ ছাড়া এই অঞ্চলে বাড়তি ৩৫ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঝুঁকি রয়েছে।”
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল ছয়টি দেশের (আফগানিস্তান, বাংলাদেশ,
নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রতিবেদনে
উল্লেখ করা হয়েছে, অতিমারীজনিত কারণে বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও খাদ্য
নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধির মাত্রা জনস্বাস্থ্যকে আরও নাজুক করে তুলেছে।
প্রতিবেদনে দরিদ্রতম পরিবারগুলোর জন্য নগদ অর্থসহায়তা প্রদান কর্মসূচির
আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে অতিমারী শুরুর পর থেকে চালু করা বিভিন্ন
রাষ্ট্রীয় সামাজিক সুরক্ষামূলক প্রকল্পকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে
একইসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাদের পুরো প্রভাবের মূল্যায়নের এখনও
প্রয়োজন রয়েছে।
সম্পাদকদের জন্য নোট:
পুরো প্রতিবেদন এবং ৪-পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্তসার পাওয়া যাবে এখানে।
মাল্টিমিডিয়া ডাউনলোড করুন এখান থেকে।
ডব্লিউএইচও সম্পর্কিত
ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বিশ্বের জনসংখ্যার এক
চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষের বসবাস। এই অঞ্চলে প্রায় দুইশ’ কোটি মানুষের
জন্য আরও ভালো, আরও স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যত গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ডব্লিউএইচও
বিদ্যমান এবং নতুন করে দেখা দেওয়া মহামারিজনিত ও জনসংখ্যাতাত্ত্বিক
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ১১টি সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এই অঞ্চলে
আটটি অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচি রয়েছে: প্রসূতি, পাঁচ বছরের কমবয়সী ও
নবজাতকের মৃত্যুহার কমানো; হাম ও রুবেলা নির্মূল; অ-সংক্রামক রোগসমূহ
প্রতিরোধ; স্বাস্থ্য ও অপরিহার্য ওষুধের জন্য মানবসম্পদের দিকে লক্ষ্য রেখে
সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা; অণুজীববিরোধী প্রতিরোধ্যতার
বিরুদ্ধে লড়াই করা; জরুরি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য সক্ষমতা বাড়ানো;
অবহেলিত ক্রান্তীয় রোগসমূহ নির্মূল এবং যক্ষ্মা নির্মূলে প্রচেষ্টা
ত্বরান্বিত করা।
ইউএনএফপিএ সম্পর্কিত
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল হচ্ছে জাতিসংঘের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য
সংস্থা, যা মাতৃমৃত্যু, পূরণ না হওয়া পরিবার পরিকল্পনার চাহিদা এবং নারী ও
মেয়েদের বিরুদ্ধ লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা ও ক্ষতিকর আচরণ বন্ধে ১৫০টিরও বেশি
দেশে কাজ করছে। ১৯৯৪ সালে জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে
(আইসিপিডি) গৃহীত ‘প্রোগ্রাম অব অ্যাকশনের’ আলোকে লৈঙ্গিক সমতা ও
মানবাধিকার বিষয়ে ইউএনএফপিএকে আইনগত কর্তৃত্ব দেওয়া হয়। ইউএনএফপিএর
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতায় এশিয়ার ২২টি দেশ এবং
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৪টি দেশ রয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আমাদের
কার্যক্রম সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন: unfpa.org/COVID19।
আমাদের এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক কার্যালয়কে অনুসরণ করুন টুইটার, ফেসবুক ও
ইনস্টাগ্রাম-এ। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের আমাদের মাল্টিমিডিয়া উদ্যোগ
‘হিউম্যানস অব আইসিপিডি’-তে যোগ দিন।
প্রতিটি শিশুর অধিকার ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বিশ্বের ১৯০ টি দেশে কাজ
করছে ইউনিসেফ। সকল বঞ্চিত শিশুদের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা কাজ করি
বিশ্বের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে।
আমাদের কাজ সম্পর্কে আরো জানতে ভিজিট করুন: www.unicef.org.bd