শ্রমিক সংকটে দশমিনায় বিপাকে পড়েছে মুগডাল চাষিরা
সঞ্জয় ব্যানার্জী, দশমিনা(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।।
পটুয়াখালীর দশমিনায় শ্রমিক সংকটের কারণে মুগডাল ঘরে তোলা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। প্রচন্ড তাপদাহে মাঠে কাজ করতে পারছেনা শ্রমিকরা আর তাই ক্ষেতের ডাল ক্ষেতেই ঝরে যাচ্ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছে মুগডাল চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ানে ৭৮২৮ হেক্টর জমিতে মুগডাল আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে বারি মুগ-৫, বিনা মুগ-৮ ও বারি মুগ-৬ বেশি আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বেশি আবদ হয়েছে। উপজেলা
উপজেলার কয়েকটি এলাকায় মুগডাল ক্ষেতে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ডাল পেকে সবুজের ফাঁকে ফাঁকে কালো হয়ে গেছে। রৌদ্রের তাপে ডালের ছড়া পেকে ফেটে গিয়ে ক্ষেতেই ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে। এসময় স্থানীয় কয়েক কৃষক জানান, রৌদ্রের প্রচন্ড তাপদাহের কারণে আর শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। একারণে চাষিরা পড়েছে বিপাকে।
ডাল চাষি বহরমপুর ইউনিয়নের ইউনুছ তালুকদার বলেন, ‘শ্রমিকদের অধিক মুজুরি দিয়েও ক্ষেত থেকে ডাল তোলানো যাচ্ছেনা। দুই দিন ধরে এলাকার কিছু নারী শ্রমিকদের সাথে চার ভাগের এক ভাগ ডাল বিনিময় চুক্তিতে শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে ডাল তুলছেন। তা আবার ভোর বেলা সূর্য ওঠার আগে থেকে শুরু করে সকাল সারে সাতটা আটটার মধ্যে শেষ করে। কারণ এরপড় যে রৌদ্রের তাপ শুরু হয়, সেই তাপের মধ্যে ক্ষেতে বসে থাকা সম্ভব হয় না।’
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিন দাসপাড়া গ্রামের চাষি শংকর চন্দ্র বলেন, ‘আগে ক্ষেত থেকে ডাল তুলে দিলে নারী শ্রমিকদের দৈনিক ৮-১০ ঘন্টা কাজে তিন কেজি ডাল দিলে শ্রমিকের অভাব হতো না। অথচ এ বছর প্রচন্ড রৌদ্রের তাপের কারনে শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে তার সংগ্রহের চার ভাগের এক ভাগ ডাল। এতে করে চাষিদের লোকাসনের মুখে পড়তে হচ্ছে।’ একই আরেক চাষি জামাল হাওলাদার বলেন, আমি এক একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল প্রজাতীর পনেরো কেজি মুগডাল চাষ করেছি। ব্যায় হয়েছে প্রায় সারে সাত হাজার টাকা। গাছে যে ভাবে ফল এসেছিল তাতে প্রতি একরে ৮মন ডাল পাওয়া যেত । বর্তমান বাজার মূল্যেও ভালো। ক্ষেতে প্রথমে দেখা দেয় লেদা পোকার আক্রমন। পোকায় ক্ষেতের অনেক ডাল বিনষ্ট করে ফেললে ওষুধ ছিটিয়ে কিছু ডাল রক্ষা হয়। কিন্তু বর্তমানে শ্রমিক সংকটের কারনে ডাল পেকে ক্ষেতে ঝড়ে পড়ার উপক্রম। তাই বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের সাথে বিগত বছরের চেয়ে অধিক বিনিময় চুক্তি করে ক্ষেত থেকে ডাল তুলতে হচ্ছে।’
ক্ষেত থেকে ডাল তুলছেন এমন কয়েকজন নারী শ্রমিক সর্মি, তাছলিমা, লাকি, মুক্তা রানী, কালী রানী ও স্বর্মিলা বলেন, ‘রোদের এই তাপে কোন ভাবেই এক সাথে ত্রিশ মিনিট বসা যায় না। ভোরে সেহেরী খেয়ে নামাজ পড়ে আলো হলেই ক্ষেতে আসেন। সকালে রোদের তাপ বাড়লেই বাড়ি চলে যান।’
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মোঃ জাফর আহম্মদ বলেন, ‘আসলে এটা একটা প্রকৃতিক দুর্যোগ বলতে পারেন। এ সময় কোন বৃষ্টি না হওয়ায় রৌদ্রের তাপদাহের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারপড়েও কৃষকদের বলা হয়েছে শ্রমিক মুজুরি যদি বেশি যায় তবুও ক্ষেত থেকে ডাল তুলে ফেলুন। তাতেও কৃষকদের লোকসান হবে না। কারন বিগত বছরের চেয়ে এ বছর ডালের দাম অনেক বেশি।##