করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন আজ বৃহস্পতিবার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট ছিল অনেকটাই ফাঁকা। কিছু পণ্যবাহী গাড়ি, জরুরি দু–একটি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ছাড়া তেমন কোনো যানবাহন চলেনি। তবে দু-একজনকে মহাবিপাকে পড়ে ঘাট পার হতে দেখা যায়।রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া নৌপথ। কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন আজ এই রুটে ফেরি চলাচল ছিল স্বাভাবিক। নদী পাড়ি দিয়ে আসা ফেরিগুলোতে পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া তেমন কোনো গাড়ি দেখা যায়নি। দু-একজন যাত্রীকে খুবই বিপদে পড়ে পার হতে দেখা যায়।সরেজমিন সকাল আটটা থেকে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, গোয়ালন্দ ঘাট থানা–পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান আকন্দ কয়েকজন সদস্য নিয়ে মোটরসাইকেলে করে টহল দিচ্ছেন। মাস্ক ছাড়া লোকজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখে যার যার ঘরে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।ফেরিঘাটের দোকান লোকজন নিয়ে সরানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন জিলাল ব্যাপারী। আলাপকালে তিনি বলেন, কঠোর বিধিনিষেধে চায়ের দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া নদীতে পানি বাড়ায় সমস্যা হচ্ছে। তাই দোকান ভেঙে সরিয়ে ফেলছেন।কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের আরজু মণ্ডল থাকেন নবীনগর। পড়াশোনার পাশাপাশি পোশাক ডিজাইনের কাজ শিখছিলেন। গতকাল বুধবার রাতে মায়ের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পেয়ে আজ সকাল ছয়টায় রওনা করেন।নবীনগর থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত আসতে লেগেছে প্রায় এক হাজার টাকা। আজ সকাল ১০টার দিকে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে পাটুরিয়া থেকে আসা রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরে করে ঘাটে নামেন। আরজু বলেন, বাড়িতে বাবা ছাড়া কেউ নেই। মা খুব অসুস্থ। গতকাল রাতেই তাঁকে কুষ্টিয়া ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।আরজু মণ্ডলের সঙ্গে ছিলেন খালাতো ভাই বায়েজিদ শেখ। তিনি বলেন, বিপদে না পড়লে কেউ শখ করে বের হয় না। তিনি আরও বলেন, ‘নবীনগর থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত আসতে সময় লাগে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা। ভাড়ায় খরচ হয় মাত্র ১০০ টাকা। অথচ আজ আমরা দুই ভাই সকাল ছয়টায় রওনা করেছি। সাড়ে চার ঘণ্টা সময় নিয়ে সারা রাস্তা কিছুক্ষণ ট্রাকে, কিছুক্ষণ অটোরিকশা, আর কিছু পথ হেঁটে আসতে হয়েছে।’ফেরিঘাট এলাকায় টহলরত গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, ‘ভোর থেকে ডিউটিতে আছি। পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছি। ভোরে কিছু অটোরিকশা দেখেছিলাম। তাদের বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। ঘাট এলাকায় এখন পুলিশ, সাংবাদিক ছাড়া কাউকে দেখছি না।’
দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় কর্তব্যরত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) টার্মিনাল তত্ত্বাবধায়ক শওকত আলী বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ১৪টি ফেরি চলছে। পণ্যবাহী ও জরুরি গাড়ি পারাপারে সব কটি ফেরি চালু রাখা হয়েছে।