মোঃ রনি আহমেদ রাজু ক্রাইম রিপোর্টার
ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের এখন ঘরবন্দি জীবন। অনলাইনে চলছে কেনাকাটার ধুম। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারিও মাদককে রুখতে পারছে না বরং করোনাকালে বেপরোয়া মাদক ব্যবসায়ীরা। চলছে অনলাইনে মাদক বেচাকেনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত আইডি খুলে অনলাইনে মাদকের হাট বসানো হয়েছে।
ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমেও বেচাকেনা হচ্ছে মাদক। অনলাইনে মাদকের অর্ডার করলেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে সব ধরনের মাদকের হোম ডেলিভারি। আর হোম ডেলিভারিতে নিজস্ব ডেলিভারিম্যানের পাশাপাশি প্রচলিত ডেলিভারি সার্ভিস এবং কুরিয়ার ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে।সম্প্রতি অনলাইন অর্ডারের ডেলিভারি দেওয়ার সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েক জনকে আটক করেছে। তবে বাহক ধরা পড়লেও গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনলাইনে মাদক বেচাকেনার কারণে রাজশাহী শহরের পাশাপাশি গ্রামে-পাড়া-মহল্লায় অনেকের হাতেই এখন মাদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়মিত চলছে বলা হলেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে মূলত এখন মাদকবিরোধী অভিযান খুব কমই হচ্ছে। অতীতেও মাদকবিরোধী অভিযান কিছুদিন চলার পর তা ঝিমিয়ে পড়ে।এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক কারবারীরা জেলা, উপজেলা, শহর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় অবাধে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। মাদক সহজলভ্য হওয়ায় যুব সমাজের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্ররাও ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। আর এই মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে চুরি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। অভিভাবকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সেই জিরো টলারেন্স নীতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাাহিনী বাস্তবায়ন করলেই মাদক নির্মূল করা সম্ভব। তবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণির সদস্য, স্থানীয় এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা জড়িত রয়েছেন। সেসব রাজনৈতিক নেতাদের এখন পকেটভর্তি টাকা। এ কারণেই মাদকবিরোধী অভিযান সফল হচ্ছে না। টেকনাফসহ দেশের সব সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক আসছে। ২ থেকে ৫ লাখসহ বড় বড় চালান এখনো আসছে। সীমান্ত দিয়ে যে পরিমাণ মাদক আসছে তার ১০ ভাগের এক ভাগও ধরা পড়ে না। মাদকে কাঁচা টাকা দ্রুত আসে। এ কারণে বেকার যুবক, নারী-পুরুষ সবাই এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। অনেক ছোটখাট ব্যবসায়ীও করোনার কারণে বেকার হয়েছেন। তারাও গ্রামে গিয়ে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। এভাবে মাদকের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেলে তা রোধ করা কঠিন হবে।সংশ্লিষ্টরা বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান টেকনাফ হয়ে পণ্যবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি সেবার গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। অনলাইন ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের মধ্য দিয়ে মাদকের বড় বড় চালান মাঝারি কারবারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে যাচ্ছে। অনলাইনে নানা গ্রুপ খুলে করোনার এ সময়ে চলছে মাদকের জমজমাট বেচাকেনা।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহসানুল জব্বার বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক নির্মূলে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে করোনার সুযোগটা নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা।পুলিশ ও র্যাবের কয়েক জন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, করোনাকালে মাদকের হোম ডেলিভারির ব্যাপারে তারা জানতে পেরেছেন। মাদক এখন মোটরসাইকেল এবং সাইকেলে করে পৌঁছে দেওয়া হয়। বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও হোম ডেলিভারি হয়। বিশেষ করে, সাইকেলে করে যেসব ফুড ডেলিভারি দেওয়া হয়, তাদের অনেকের মাধ্যমেও মাদকের হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়। অল্প কিছু টাকার লোভে পড়ে তারা মাদকের ডেলিভারি দিচ্ছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। মাদকের জোগান বন্ধে তারা কাজ করছে। দ্রুতই মাদকের হোম ডেলিভারি সিস্টেম ভেঙে দিয়ে মূল হোতাদের গ্রেফতার করা হবে।