কক্সবাজারে
ঘর ছেড়ে পালিয়েছে ইয়াবা পরিবার তাদের খুঁজছে পুলিশ!
মোঃ রনি আহমেদ রাজু ক্রাইম রিপোর্টার
কক্সবাজার শহরের আলোচিত ইয়াবা পরিবার জাফর মিস্ত্রির পরিবার পালিয়ে
বেড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশ তার বাড়িতে বেশ কয়েকবার অভিযান চালালেও কাউকে
ধরতে পারেনি। পুলিশের আটক এড়াতে ‘কোটিপতি জামাই’ পারভেজের শ^শুর জাফর
মিস্ত্রি, জাফর মিস্ত্রির মেয়ে রোমা আক্তার ও ছেলে অভিক আত্মগোপনে রয়েছে।
দিনের বেলায় এলাকায় ঘুরাফেরা করলেও রাতে বাসায় থাকছে না ইয়াবা কারবারি জাফর
মিস্ত্রি। একই সাথে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে রয়েছে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার
আসামী অভিক। কলাতলী দক্ষিণ আদর্শ গ্রাম এলাকায় একটি ভবনে আত্মগোপনে রয়েছে
পারভেজের স্ত্রী রোমা আক্তার। তবে পুলিশ তাদের হন্য হয়ে খুঁজছে বলে জানা
গেছে।জানা যায়, কক্সবাজারের শীর্ষ কয়েকজন ইয়াবা কারবারির মধ্যে পারভেজ
অন্যতম। ইয়াবার টাকায় কয়েক কোটি টাকার মালিক পারভেজ। এমন কোটিপতি ছেলে দেখে
মেয়েও বিয়ে দেন শহরের ১০নং ওয়ার্ড মোহাজের পাড়া এলাকার জাফর মিস্ত্রি।
পূর্ব মোহাজের পাড়া এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে ‘কোটিপতি জামাই’ বলে। অনেকেই
পারভেজকে কোটিপতি ‘ইয়াবা জামাই’ হিসেবে চেনেন।গত কয়েক মাস ধরে পারভেজের
ইয়াবা কারবার নিয়ে ভয়েস ওয়ার্ল্ড ২৪ ডটকমে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে পারভেজ, পারভেজের শশুর জাফর মিস্ত্রি, পারভেজের
স্ত্রী রোমা আক্তার ও জাফর মিস্ত্রির ছেলে অভিকের বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশিত
হয়। তাদের পারিবারিক ইয়াবা কারবার নিয়ে তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে
বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা। এই নিয়ে শুরু হয় তদন্তও। তাদের
ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকার বিষয়টিও প্রমাণ মেলে।জানা গেছে, সম্প্রতি সময়ে
চট্টগ্রাম থেকে পুলিশের একটি বিশেষ টিম এসে মোহাজের পাড়ায় জাফর মিস্ত্রির
বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানের আগেই ছটকে পড়ে জাফর মিস্ত্রির পুরো পরিবার।
জাফর মিস্ত্রির ঘরও তল্লালি চালানো হয়। অভিযানের সময় চট্টগ্রামে ইয়াবাসহ
আটক হওয়া দুই ব্যক্তিকে সঙ্গে আনেন বিশেষ টিমটি। জাফর মিস্ত্রি ও পারভেজের
ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য বলে জানা গেছে চট্টগ্রামে আটক হওয়া দুই ব্যক্তি।
অভিযানে অভিকের স্ত্রী ঘরে থাকলেও বাকিরা সবাই পালিয়ে যায়। ওই সময় পারভেজের
স্ত্রী রোমা আক্তার আত্মগোপনে থাকেন কলাতলী দক্ষিণ আর্দশ গ্রামের একটি
আলিশান ভবনে। যেটা ইয়াবা কারবারি পারভেজের ভবন। অভিযানে পারভেজ, জাফর
মিস্ত্রি, রোমা আক্তার ও অভিককে না পেয়ে ফিরে যান চট্টগ্রাম থেকে আসা
টিমটি। টিমটি জাফর মিস্ত্রির পরিবার নিয়ে আরো অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলে জানা
গেছে।
এদিকে গত ১০ দিনের ব্যবধানে দু’বার জাফর মিস্ত্রির বাড়িতে হানা দেন সদর
থানার একদল পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তখনেই পালিয়ে যায় জাফর
মিস্ত্রি ও পারভেজের স্ত্রী রোমা আক্তার। তবে হত্যা মামলা হওয়ার পর কৌশলে
আত্মগোপনে রয়েছে জাফর মিস্ত্রির ছেলে ছিনতাইকারী অভিক।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, জাফর মিস্ত্রির বাড়িতে কয়েক দফা পুলিশ
এসেছিল। পুলিশ এসে জাফর মিস্ত্রি, তার মেয়ের জামাই পারভেজ, পারভেজের স্ত্রী
রোমা আক্তার ও জাফর মিস্ত্রির ছেলে অভিককে খুজছে। তাদের বাড়িটি গলির ভিতরে
হওয়ায় পুলিশ আসার খবরে কৌশলে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছে প্রতিবার। সর্বশেষ পুলিশ
গিয়ে খোজ করেন জাফর মিস্ত্রিকে। এসময় তারা পলাতক থাকায় কাউকে আটক করতে
পারেনি।
একটি সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের অভিযানের পর থেকে কৌশলে আত্মগোপনে রয়েছে
জাফর মিস্ত্রি, রোমা আক্তার, পারভেজ ও অভিক। দিনের বেলায় জাফর মিস্ত্রি ও
রোমা আক্তারকে এদিক ওদিক দৌড়ের উপর দেখা গেলেও রাতে তারা বাড়িতে থাকছে না।
নিজেদের আটক এড়াতে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে পুলিশ তাদের হন্য হয়ে
খুঁজছে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরে পারভেজের রয়েছে বিশাল সম্পদ। কলাতলীতে
দুইটি, মোহাজের পাড়া ও পেশাকার পাড়ায় রয়েছে জমিও। এসব জমিতে রয়েছে বহুতল
ভবন। তবে এসব সম্পত্তির মালিক পারভেজের স্ত্রী রোমা আক্তার। পারভেজ
ইতিমধ্যে ৪ থেকে ৫ বার র্যাব ও পুলিশের হাতে বিশাল ইয়াবার চালান নিয়ে আটক
হয়েছিল। কিন্তু কৌশল হিসেবে ইয়াবার টাকায় কেনা সব সম্পত্তির মালিক বানিয়েছে
নিজ স্ত্রী রোমা আক্তারকে। সব কিছু রোমা আক্তারের নামে। স্ত্রী নিজ ইচ্ছায়
চালিয়ে যাচ্ছে খরচ। রোমা আক্তার নিজেই পিতাকে বানিয়ে দিয়েছে বহুতল ভবন।
ভাইকে দিয়েছে দোকানও। পুরো ইয়াবা পরিবারটি বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বেশির
ভাগ সময় কলাতলীর দুইটি ভবনে আত্মগোপনে থাকে জাফর মিস্ত্রি ও রোমা
আক্তার।র্যাব সূত্রে জানা গেছে- কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের
সময় ফেনী সদরে র্যাবের হাতে আটক হয়েছিল মো. পারভেজ উদ্দিন। ২০১৮ সালের ২৮
আগস্ট ৪৯ হাজার ১শত পিচ ইয়াবা নিয়ে আটক হন পারভেজ।
এরপর ফের ইয়াবাসহ কক্সবাজার সদর থানায় গ্রেফতার হন মো. পারভেজ উদ্দিন। ২০১৯
সালের ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ইয়াবাসহ সদর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার
করেন।সর্বশেষ চলতি বছরের (২০২১ সাল) ১৮ জানুয়ারি বাঁশখালী থানাধীন রামদাস
মুন্সির হাট এলাকা থেকে ২২ হাজার ৫৯০ পিস ইয়াবাসহ পারভেজকে আটক করে
র্যাব-৭ এর সদস্যরা।অনুসন্ধানে জানা যায়, পারভেজের এই ইয়াবা কারবারে
সহযোগিতা রয়েছে শ^শুর জাফর মিস্ত্রি, শালা সাইফুল ইসলাম অভিক ও লাকী আক্তার
ও পারভেজের স্ত্রী রোমা আক্তারের। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ইয়াবাসহ আটক হলেও
কোটি কোটি টাকা আয় করেন পারভেজ। তার রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ইয়াবাসহ
আটক হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায়ও কৌশলে ইয়াবা কারবার চালিয়েছিল পারভেজ ও তার
পরিবারের সদস্যরা।একটি সূত্রে জানা গেছে, পারভেজ ও তার স্ত্রী রোমা
আক্তারের নামে ব্যাংক একাউন্ট থাকলেও তেমন লেনদেন নেই। কৌশল হিসেবে স্ত্রী
রোমা আক্তার তার কয়েকজন ঘরের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের নামে খুলেছে ব্যাংক
একাউন্ট। তাদের একাউন্টে রয়েছে ইয়াবার যাবতীয় টাকা। কিন্তু কৌশল হিসেবে
কক্সবাজার শহরে যেসব জমি ও ভবন করা হয়েছে সব গুলো রোমা আক্তারে