কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারা
কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূজামণ্ডপে হামলা ও দিনভর সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ছিলেন অনেকটাই দর্শকের ভূমিকায়।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এখানকার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিভেদ অনেক দিনের। এ কারণে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে জোরালো কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি দলটির নেতা-কর্মীরা
১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ে অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে হামলা হয়। এরপর কুমিল্লায় আরও চারটি মন্দির ও ছয়টি পূজামণ্ডপে হামলা এবং দিনভর শহরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। প্রথম নানুয়া দীঘির পূজামণ্ডপে হামলার পর ঘটনাস্থলে মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দু-একজন নেতাকে উপস্থিত হতে দেখা গেলেও দলগতভাবে সংখ্যালঘুদের রক্ষায় বড় কোনো ভূমিকা রাখতে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সেভাবে দেখা যায়নি। কুমিল্লার ঘটনার জেরে পরে চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মণ্ডপে-মন্দিরে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা হয়।
কুমিল্লার ঘটনায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক শক্তি—কার, কী ব্যর্থতা আছে, এ নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দেশে না থাকায় কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। তবে প্রশাসন, পুলিশ ও দলের নেতা-কর্মী এমনকি বিএনপির মেয়র মনিরুল হকের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন।সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাননি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাংসদ বাহার বলেন, প্রথম কয়েক ঘণ্টা কিছুটা সমস্যা হয়েছে। পরে নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিলেন।আ ক ম বাহাউদ্দিন ঘটনার সময় ওমরাহ পালনের লক্ষ্যে সৌদি আরবে ছিলেন। পাঁচ দিন পর ১৭ অক্টোবর কুমিল্লায় ফিরে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। পরদিন টাউন হল মাঠে সম্প্রীতি সমাবেশ করেন। সেখানে বক্তৃতায় আরেক বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। কুমিল্লার সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনায় ঢাকায় টেলিভিশন টক শোতে সাংসদ বাহারকে দায়ী করেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। এর জবাবে টাউন হল মাঠের সমাবেশে গোবিন্দ প্রামাণিককে গ্রেপ্তারের দাবি করেন বাহার।১৩ অক্টোবর নানুয়া দীঘির পাড়ের ঘটনার দিন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক জি এস সহিদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলামসহ কিছু নেতা সেখানে যান। তবে তাঁরা কর্মীদের মাঠে নামাননি।মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নূর উর রহমান মাহমুদও নানুয়া দীঘির পাড়ে গিয়েছিলেন। তিনি ঘটনার পরদিন সাদা পতাকা মিছিল করেন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান। এ জন্যই তিনি নিজের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন।স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সাধারণত বিরোধী দলের কোনো কর্মসূচি থাকলে তা ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শহরের অলি-গলি ও মোড়ে অবস্থান নেন। কোথাও কোথাও মোটরসাইকেল মহড়া দেন। কিন্তু ১৩ অক্টোবরের ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।
মন্দিরে-মণ্ডপে হামলার দিনের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে মুজিবুল হক কিছু বলতে চাননি।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মূল্যায়ন হচ্ছে, কুমিল্লার ঘটনা এবং এর জেরে দেশের বিভিন্ন জেলায় মণ্ডপ-মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলার ঘটনাগুলো পরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্রের অংশ। যেখানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা খারাপ কিংবা অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে, সেখানেই সুযোগ নিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। আওয়ামী লীগ শক্তভাবে মাঠে থাকলে দুষ্কৃতকারীরা এতটা চড়াও হওয়ার সাহস হয়তো পেত না।