মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির সময়ে ৩০ শতাংশ কর্মহীন ও দরিদ্রকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আনা প্রয়োজন, বলছেন অর্থনীতিবিদরা
ভূঁইয়া আশিক রহমান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, সামাজিক অস্থিরতা শুধু অর্থনীতির কারণেই হয় না, রাজনীতিও বড় ভূমিকা পালন করে। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে দেশে বড় ধরনের সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা নেই। তবে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বা বিভিন্ন প্রকল্পগুলোর আওতা বাড়াতে হবে। যাতে দরিদ্রদের জীবনযাত্রা মান পড়ে যাওয়া ঠেকানো যায়। দারিদ্র্যসীমার নিচে বা কাছাকাছি থাকাদের মূল্যস্ফীতি চাপ বহন করা কঠিন হবে। সামাজিক নিরাপত্তার বেনিফিশিয়ারিদের সংখ্যা ও টাকার অংক বাড়াতে হবে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। এতে কম আয়ের মানুষের নাভিশ^াস উঠছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বাড়তে থাকায় মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতি বিশ^ব্যাপীই বাড়ছে। বিশ^ থেকে আমরা অনেক কিছু কিনি। আমদানি ব্যয় যেমন বাড়ছে, দেশে উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে। দেশের অর্থনীতি চাপে থাকবে। নি¤œআয়ের মানুষ, যাদের আয় নেই বা কম, তারা অসুবিধায় পড়তে পারেন। সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে মানুষকে রক্ষা করতে হবে।
যেখানে যেখানে ব্যয় কমানো যায়, সরকারকে তা করতে হবে। টিসিবির কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। চাল বেশি আমদানি করতে গেলে খাদ্যমূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। কর্মহীন, কম আয়ের মানুষকে চাল, ডাল, তেল স্বল্পমূল্যে দিতে হবে। এই সুবিধা বাড়াতে হবে দেশব্যাপী। গ্রামের হাটবাজারেও যাতে মেলে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বন্ধ করতে হবে।
রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির বলেন, গোটা বিশে^ বা দেশে কোভিডের প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থান, আয় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। তবে বাজার ব্যবস্থাপনায় কিছুটা দুর্বলতা আছে। একশ্রেণির সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী এই সময়টাকে পুঁজি করে সিন্ডিকেট তৈরি করে। যেকোনো সংকটের সময় সিন্ডিকেট তার সুবিধা নিতে অপতৎপরতা চালায়। বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ সেই সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে ভোক্তারা ক্ষতির মুখে পড়েন।
নিত্যপণ্যে কোভিডের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হবে না। তবে আগামী আরও কয়েকমাস কোভিডের নেতিবাচক প্রভাব থাকবে। বিশ^বাজারেই কোভিড পরবর্তী সময়ে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশে^র অনেক দেশের তুলনায় আমরা অনেক ভালো করছি। কিন্তু সংকট পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই সময়ে আমরা আমাদের রিসোর্স যদি ভালোভাবে ব্যবহার করতে না পারি, শুধু অর্থনীতির সক্ষমতা দিয়ে তা মোকাবেলা করতে পারবো না।
সরকার বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে হবে। দেশব্যাপী এর ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর গতি বাড়াতে হবে। কারণ গরিব মানুষদের জন্য বেশ খারাপ সময় চলছে। এই সময়ে সরকারি সহায়তা তাদের কষ্ট হ্রাস করতে পারে। সম্পাদনা : হাসান হাফিজ