কিশোরগঞ্জে
চুলের ক্যাপ তৈরি কারখানা খুলে জীবিকার উৎস হাজারো বেকার নারী!
মোঃরনি আহমেদ রাজু ক্রাইম রিপোর্টার
তো কিছু দিন আগের কথা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার অসহায়- দরিদ্র বেকার
নারীরা কাজের খোঁজে পাড়ি জমাতেন ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে ।সেদিন পেরিয়ে এখন
ঘরের দুয়ারে চুল দিয়ে তৈরি ক্যাপ কারখানা খুলে জীবিকার উৎস বানিয়েছেন। এতে
কাজ করে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছেন হাজারো অসহায়-বেকার দরিদ্র
নারী। এসব নারী চুল দিয়ে তৈরি করছেন টাক মাথায় ব্যবহারের পরচুল। এতে নারীরা
প্রতি মাসে আয়ও করছেন ৮ থেকে ১০হাজার টাকা। ফলে নারীরা অবিভাবক কিংবা
স্বামীর সংসারে যোগান দিচ্ছেন বাড়তি টাকা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এ উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত জনপদে নারী
উদ্যেক্তাসহ প্রাইভেট কোম্পানির সহায়তায় গড়ে উঠেছে ১০থেকে ১৫টি চুল দিয়ে
তৈরির ক্যাপ কারখানা। সেখানেই নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে যোগ দিচ্ছেন কাজে।
তাদের হাতের নিখুঁত গাথুঁনির শৈল্পিক ছোঁয়ায় তৈরি চুলের ক্যাপ রপ্তানি
হচ্ছে চীনসহ বিভিন্ন মধ্য
প্রাচ্যের দেশে। ঘরের দোরগোড়ায় এমন কর্মসংস্থান মেলায় প্রতিবন্ধী,
স্বামী পরিত্যাক্তাসহ অসহায়-বেকার নারীদের কাছে মনে হয় স্বপ্নে
পাওয়া আলাউদ্দিনের চেরাগ। আর সেখানে নানা বয়সি নারী কাজ করছেন ফুর ফুরা
মেজাজে।
উপজেলার বাহাগিলী ইউপি'র নয়ানখাল ডাঙ্গারহাট গ্রামীণ হেয়ার ক্যাপ
কারখানার ব্যবস্থাপক মাহফুজার রহমান জানান,এ কারখানাকে কেন্দ্র করে এলাকার
অনেক বেকার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।এতে অচিরেই এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক
প্রেক্ষাপট পাল্টে যাবে।ওই কারখানায় কাজ করা নুর বানু,শরিফাসহ একাধিক নারী
শ্রমিক জানান, এখন চুলের কারখানায় তাদের একমাত্র রোজগারের সম্বল। এখানে কাজ
করে তারা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি
ফুটিয়েছে। গ্রামে থেকেও মাসে ৮থেকে ১০হাজার টাকা পরিবারের হাতে তুলে দিতে
পারছি এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কি আছে? প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে এত দিন স্বামী
কিংবা অভিভাবকদের কাছে হাত পাততে হতো। এখন আর কারো কাছে হাত পাততে হয় না।
কিশোরগঞ্জ সদর গ্রামীন ব্যাংক সংলগ্ন তুহিন হেয়ার ক্যাপ ফ্যাক্টরী (লিঃ) এ
কাজ করা একাদশী, পার্বতী রানী জানান, ঢাকার মত জায়গায় কাজ করে টাকা জমানো
যায়না।এখন বাড়িতে বসে সংসার সামলানোর পাশাপাশি হাতের কাছে কারখানায় কাজ করে
৮থেকে ১০হাজার টাকা আয় হয় । এখানে একটি ক্যাপ তৈরি করতে ৩থেকে ৫দিন সময়
লাগে। একটি ক্যাপ ৫শ থেকে ১১শ টাকা মজুরী পাওয়া যায়। ওই ফ্যাক্টরির পরিচালক
ইসতে মারুল ইসলাম তুহিন জানান, এ এলাকায় মিল কারখানা না থাকায় বিভিন্ন
জায়গায় কাজ করে কোন মতে সংসার চালান পুরুষরা। নারীরা এখানে কাজ করে
স্বাবলম্বী হওয়ায় জীবনযাত্রার মান পাল্টাচ্ছে। তিনি আরো জানান, এ ক্যাপ
তৈরি করার পর ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে বায়াররা ক্রয় করে বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন। স্থানীয়রা জানান, আমরা কল্পনাও করিনি এ এলাকায়
এমন শিল্প গড়ে উঠবে। ছোট পরিসরে গড়ে উঠা এ শিল্পতে কাজ করে ঘরে বসে থাকা
নারীরা ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। দৈনন্দিন সকালে কিংবা বিকেলে ঝাঁকে ঝাঁকে
নারীদের কর্মস্থলে যোগদান আর বাড়ি ফেরার দৃশ্য সত্যিই রোমাঞ্চকর ব্যাপার।
এ যেন ঢাকার শহরের চির চেনা রুপ। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাম্মৎ
সাবিকুন্নাহার জানান,এ অঞ্চল এখন বাংলাদেশের জন্য রোল মডেল। নারীর মাথার
আচঁরানো কিংবা ঝরে পড়া চুল দিয়ে তৈরি ক্যাপ কারখানায় কাজ করে অনেক নারী
অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার
দাবিদার। তারা নিজের ও দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন।
বেকার নারীদের জন্য এটি একটি ইতিবাচক দিক।