লালমনিরহাট হাতীবান্ধা উপজেলায় অননুমোদিত ক্লিনিকে নবজাতকের মৃত্যু রহস্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি
মেহেরুবান হাবিব,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় অননুমোদিত হেলথ অ্যান্ড মেডিকেয়ার ক্লিনিকে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটি। এ অননুমোদিত ক্লিনিক নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তদন্তে নামে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযোগকারী ও আসামিদের বক্তব্য শুনতে ডা. বিকেলে তদন্ত কমিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেন।
তদন্ত শেষে কমিটির প্রধান এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ দীপংকর রায় গণমাধ্যমকে জানান, অনুমোদন ছাড়া ক্লিনিক পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও ক্লিনিকটি কীভাবে চলছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে যে ২২ জানুয়ারী মধ্যরাতে ক্লিনিকে একটি প্রসূতি সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়েছিল। কয়েক ঘন্টা পরে নবজাতকের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় নবজাতকের পরিবার এ ঘটনায় অভিযোগ করলে স্থানীয় এক রাজনৈতিক দলের নেতার হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিমাংসা হয়। অপারেশনটি করেন ক্লিনিকের আবাসিক সার্জন ডাঃ রাজিবুল হাসান।
তদন্ত অনুযায়ী, ডাঃ রাজিবুল হাসান তার মেডিকেল সার্টিফিকেটে এমবিবিএস (রাজ), সি-আল্টা এবং পিজিটি-সার্জারি আছে বলে দাবি করলেও তার বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভিন্ন পাওয়া গেছে। তিনি একজন এমবিবিএস ডাক্তার মাত্র। তার বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার বড় সারালপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আফজাল হোসেন।
জানা যায়, সিজারের মতো অপারেশন করতে হলে চিকিৎসককে গাইনোকোলজিস্ট ও সার্জন হতে হবে। এছাড়াও, সিজারিয়ান বিভাগে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং প্রসূতি সার্জন, একজন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ এবং অপারেটিং থিয়েটারে একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকবেন। এর কিছুই এই ক্লিনিকে গৃহীত হয় না। শুধুমাত্র ডাঃ রাজিবুল হাসান, একজন এমবিবিএস ডাক্তার এবং কয়েকজন নার্স অপারেশন থিয়েটারে সবকিছু করেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে অননুমোদিত ক্লিনিকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এ ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অনুমতি ছাড়া ক্লিনিকটি বন্ধ না হওয়ায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ দীপংকর রায়কে সভাপতি এবং হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (এমওডিসি) ডাঃ আরিফুল ইসলামকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সারাদিন তদন্ত করে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সভাপতি এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ দীপংকর রায়। তিনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক চালানোর কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া টিনশেট বাড়িতে ক্লিনিক স্থাপনের সুযোগ নেই। এরপরও ক্লিনিকটি কীভাবে চলছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন জেলা সিভিল সার্জনের কাছে পাঠানো হবে।