বগুড়ায় করোনার টিকাদিতে টাকা নেওয়াই দুই স্বাস্থ্য সহকারীর বদলী!
মোঃ রনি আহমেদ রাজু স্টাফ রিপোর্টার
বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় করোনা টিকা দিতে টাকা নেয়ার অভিযোগে ২জন স্বাস্থ্যসহকারীকে বদলী করেছেন কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার(১৬জুন) বগুড়া সিভিল সার্জন অফিস থেকে এই নির্দেশনা আসে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিৎ করেছেন উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
বদলী হওয়া স্বাস্থ্য সহকারীরা হলেন সেলিমুজ্জামান সেলিম এবং আবু বকর। সেলিমুজ্জামান সেলিমকে বগুড়া সোনাতলা উপজেলায় এবং আবু বকরকে বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলায় বদলী করা হয়।তবে এই ঘটনায় এখনো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে আছেন আরেকজন স্বাস্থ্যসহকারী মনিরুল ইসলাম মানিক। তিনি প্রতিজনের কাছ থেকে ৭০টাকা করে নিতেন।যার ৫০টাকা রেজিস্ট্রেশনের কথা বলে এবং ২০টাকা মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানোর কথা বলে।জানা যায় গত মঙ্গলবার (৭জুন) আড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে করোনা টিকা চলাকালে টিকা নিতে আসা মানুষদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সহকারী সেলিমুজ্জামান সেলিম এবং আবু বকর টাকা নেন।একই দিন স্বাস্থ্যসহকারী মনিরুল ইসলাম মানিক আড়িয়া্ ইউনিয়নের মানিকদ্বীপা এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকে(সিসি) করোনা টিকা দেয়ার সময় প্রতি মানুষদের কাছ থেকে টাকা নেন।
টিকা নিতে এসে টাকা দেয়া একজন মোবাইল ফোনে বগুড়া সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ করেন। সিভিল সার্জনের নির্দেশে শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ২জন হেল্থ ইনস্পেক্টরকে নিয়ে সরেজমিনে আসেন। টাকা সহ স্বাস্থ্যসহকারী সেলিমুজ্জান সেলিম এবং আবু বকরকে ধরেন। পরে ওই দুজনকে টাকা ফেরৎ দিতে বলেন ও ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর(শোকজ) নোটিশ দেন।
নোটিশের জবাব পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জন সেলিমুজ্জান সেলিম এবং আবু বকরকে শাস্তিমূলক বদলির নির্দেশ দেন।পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন স্বাস্থ্যসহকারী জানিয়েছেন,গত ৪মাসের বেশি সময় ধরে স্বাস্থ্য সহকারী সেলিম, বকর এবং মানিক করোনা টিকা নিতে আসা ব্যাক্তিদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। সেই টাকা থেকে কিছু অংশ তারা আমাকেও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি তা নেই নাই।স্বাস্থ্য সহকারী মনিরুল ইসলাম মানিক মোবাইল ফোনে জানান, আমাকে শোকজ করা হয়নি। আমি টাকা নেই নাই। আমি কো্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নই। সরকারকে বিতর্কিত করতেও এই কাজ করিনাই।জানতে চাইলে হেল্থ ইনস্পেক্টর মোঃ আব্দুল হাই জানান, আড়িয়া এফডাব্লিউসি থেকে স্বাস্থ্যসহকারী সেলিমুজ্জামান ও আবু বকর করোনা টিকাদানের জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিতেন আমরা তার সত্যতা পেয়েছি। মানিকদ্বীপা এলাকায় মনিরুল ইসলাম নামের আরেক স্বাস্থ্যসহকারীও টিকা দেয়ার জন্য টাকা নেয়ার সত্যতা পেয়েছি।আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক জানান, করোনা টিকা নিতে আসা প্রতি মানুষের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসহকারী মনিরুল ইসলাম মানিক টাকা নিতেন। গ্রামের মানুষ জন আমাকে জানানোর পরে আমি ওই স্বাস্থ্যসহকারী মনিরুলের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে সমস্ত টাকা ফেরৎ দিতে বলেছি।জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসহকারী আবু বকর জানান,আমি টাকা নেই নাই।স্বাস্থ্য সহকারী সেলিমুজ্জামান সেলিম টাকা নিয়েছিল। সরকারের বদনাম করার জন্য এই কাজ করিনাই।পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন স্বাস্থ্য সহকারী জানান,স্বাস্থ্যসহকারী সেলিমুজ্জামান সেলিম এবং আবু বকর যে অপরাধ করে শাস্তি পেয়েছেন। স্বাস্থ্যসহকারী মনিরুজ্জামান মানিকও একই অপরাধ করেছেন। তিনি প্রতিজনের কাছ থেকে ৭০টাকা করে নিতেন। যার ৫০টাকা রেজিস্ট্রেশনের কথা বলে এবং ২০টাকা মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানোর কথা বলে।
কিন্তু সে(মানিক) ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে। তাকেও শাস্তির আওতায় আনার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোতারাব হোসেন জানান, করোনা টিকা নিতে আসা মানুষদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন বগুড়া সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হয়েছিল। তদন্তের আলোকে ২ জন স্বাস্থ্য সহকারীকে বদলী করেছেন সিভিল সার্জন।জানতে চাইলে বগুড়া সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃশফিউল আজম মোবাইল ফোনে জানান,তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।