রাসেল
ভাইপাস ছড়িয়ে পড়েছে, কি করতে হবে।
মো নাহিদুর রহমান শামীম মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
কিছুদিন পূর্বেও মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলের মধ্যে রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া
সাপের আনাগোনা থাকলেও এখন জেলার সর্বত্রই দেখা মিলছে মৃত্যুদূতসম ভয়ংকর এ
সাপের।
এটা কতটা মারাত্নক সেটাও এখন আর কারো অজানা নয়।
বিভিন্ন অঞ্চলে এই সাপ
ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে এবং দ্রুত বংশ বিস্তার করছে। ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক
বিরাজ করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী এ পর্যন্ত
জেলায় গত তিন মাসে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।
আজ দুপুরে হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ে হাটার সময়
স্থানীয় লোকজনের চোখে পড়ে দুটি রাসেলস ভাইপার সাপের। একটি জিও ব্যাগের ওপর
দিয়ে এলাকায় প্রবেশ করছিলো। আর অপর সাপটি নদীর পানিতে ভাসমান ছিলো। আতঙ্কিত
হয়ে উপরের সাপটিকে তৎক্ষণাৎ পিটিয়ে মেরে ফেলেন স্থানীয় লোকজন। কিন্তু
পানিতে ভাসমান সাপটি স্রোতের সাথে ভেসে চলে অন্যত্র চলে যায়। এ বিষয়ে
একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
এছড়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার কাপশাইল গ্রামে এবং সিংগাইর পৌরসভার আঙ্গারিয়া
এলাকায় দেখা মিলছে কিলিংমেশিন খ্যাত রাসেল ভাইপারের।
বিষধর সাপ হিসেবে পৃথিবীতে রাসেল ভাইপারের অবস্থান পঞ্চম। কিন্তু হিংস্রতা
আর আক্রমণের দিক থেকে এর অবস্থান প্রথম। ছোবলের পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফুলে
যায় ক্ষতস্থান। এই সাপের কামড়ে শরীরের দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি,
ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া,
পক্ষাঘাত, কিডনি ও ফুসফুসের সংক্রমণসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা
দিতে পারে। তাই জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞজনের।
এবিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.
মেহেরুবা পান্না গণমাধ্যমকে বলেন, রাসেলস ভাইপার সাপের উৎপাত বেড়েছে বলে
শুনেছি। মাঝেমধ্যে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সাপ দেখা যায়। যদি কাউকে
সাপে কামড়ায় তাহলে দেরি না করে ১০০ মিনিটের মধ্যে সরাসরি হাসপাতালে নিতে
হবে। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশনের কার্যকরী উপকার পাওয়া যাবে।
রাসেল ভাইপারসহ বিষধর সাপে কাটলে করণীয়ঃ
১. প্রথমেই সাপটিকে ধরা বা ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করবেন না। এতে করে বার বার
কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
২. কামড়ের স্থান কাটাকাটি বা বিষ অপসারণের চেষ্টা করবেন না।
৩. কামড়ের স্থান সাবান ও পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪. একটি পরিষ্কার, শুকনো কাপড় দিয়ে কামড়ের স্থান ঢেকে রাখুন।
৫. রক্ত প্রবাহ বন্ধ করার জন্য কামড়ের স্থানে শক্ত করে ব্যান্ডেজ বাধবেন
না।
৬. ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল পান করবেন না।
৭. ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করবেন না, যেমন অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন
(অ্যাডভিল, মট্রিন আইবি, অন্যান্য) বা নেপ্রোক্সেন সোডিয়াম (আলেভ)। এগুলো
খেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৮. কামড়ের স্থান ফুলে গেলে সমস্ত আংটি, ঘড়ি খুলে ফেলুন এবং টাইট পোশাক পরা
থাকলে তা খুলে আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন।
৯. যতদ্রুত সম্ভব নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া উচিত। কারণ যত তাড়াতাড়ি
অ্যান্টিভেনম শুরু করা যায়, তত তাড়াতাড়ি বিষ থেকে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি
বন্ধ করা যায়।
১০. বিশ্রাম নিশ্চিত করুন এবং শান্ত থাকুন। রোগীর যাতে আক্রান্ত অঙ্গ
নড়াচড়া না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
১১. প্রথাগত প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি, ভেষজ ওষুধ এবং অন্যান্য অপ্রমাণিত বা
অনিরাপদ প্রাথমিক চিকিৎসা এড়িয়ে চলুন।
১২. মুখ দিয়ে চুষে বিশ বের করার চেষ্টা করবেন না।
১৩. সাপে কাটা রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে অযথা মৃত্যুঝুঁকি বাড়াবেন না। দ্রুত
নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। রোগীকে সাহস দিন।
সাপের কামড় প্রতিরোধে করণীয়ঃ
১. সাপ থাকতে পারে এমন স্থানগুলি এড়িয়ে চলুন।
২. লম্বা ঘাস জাতীয় এলাকায় গেলে মোটা চামড়ার বা গামবুট ব্যবহার করুন।
৩. রাতে বাইরে হাঁটার সময় টর্চলাইট জ্বালিয়ে রাখুন।
৪. মাঠে গেলে গামবুট পরিধান করবেন এবং হাতে সব সময় লাঠি রাখুন। ঝোপঝাড়ে
বা ফসলের জমিতে কাজ করার পূর্বে লাঠি দিয়ে নড়াচাড়া করে নিন। যাতে সাপ
থাকলে বুঝতে পারা যায়।
৫. বিষধর সাপ ভক্ষণ করে এমন পাখি ও প্রাণীদের মারবেন না। যেমন- শিয়াল,
বেঁজি, গুইসাপ, ঈগল, শকুন, বন বিড়াল, পেঁচা, শঙ্খচিল প্রভৃতি। এরা বিষধর
সাপ ভক্ষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এরা মানুষের পরম বন্ধু। এদের
বাঁচার জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করুন।
৬. বাড়ির চারপাশের জঙ্গল ও জলাধার সব সময় পরিষ্কার রাখুন। যাতে সাপ
বংশবিস্তার করতে না পারে।
৭. বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সবসময় চোখে চোখে রাখুন।
৮. নিরাপত্তা সর্বাগ্রে। দুর্ঘটনা এড়াতে সর্তকতার কোন বিকল্প নেই। সর্বদা
সতর্ক থাকুন।
৯. বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব বাড়ে। এ সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
১০. রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।