দুই সাংবাদিক পরিচয়ধারীর চাঁদাবাজি, অভিযোগ পেয়েও নীরব প্রশাসন
ফিরোজ আহম্মেদ স্টাফ রিপোর্ট :
ধনবাড়ী উপজেলা শাহ পরানুল ইসলাম রণি ও ইমাম হাসান সোহানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। থানায় অভিযোগ দিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে ভূক্তভোগী ।
শাহ পরানুল ইসলাম রণি এর রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও সর্বদাই ক্ষমতাসীনদের ব্যানারে নিজেকে জাহির করেন । গত ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সহযোগি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যার হীরার সহযোগি হিসাবে কাজ করেছেন , তার ফেসবুক পেজ DPC নিউজ 24 এ আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের অনেক ভিডিও এখনো বিদ্যমান । ৫ আগস্টের পর হঠাৎ রুপ পরিবর্তন করে ক্ষমতাসীনের ব্যানার ব্যবহার করায় ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন তিনি।
অভিযোগের বিবরণ থেকে ও ভূক্তভোগী আব্দুল লতিফ জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর বিকেলে আমার ক্ষেতের জমি সমতল করার জন্য মাটি কাটাবস্থায় ধনবাড়ীতে সাংবাদিক পরিচয়ধারী শাহ পরানুল ইসলাম রণি ও ইমাম হাসান সোহান সহ আরো কয়েকজন ব্যাক্তি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দিলে মাটি কাটা বন্ধসহ পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে নেয়া এবং ফেসবুক ও পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট করে দিবে বলে হুমকি দিয়ে আসে। শুধু তাই নয় আমার মেয়ের জামাই পৌর কৃষকদলের নেতা জিল্লুর রহমানের কাছে রনি নামের কথিত সাংবাদিক চাঁদার টাকা চায় দিতে অস্বীকার করায় সন্ত্রাসী কায়দায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। বর্তমানে এই চাঁদাবাজদের হুমকির কারণে আমি ও আমার পরিবার অতংকে রয়েছি। উক্ত ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার চেয়ে ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ,ধনবাড়ী থানা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ধনবাড়ী ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি দ্রুত এই ঘটনায় মাননীয় আইন উপদেষ্টা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে জড়িদের সকলের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
ধনবাড়ী পৌরকৃষক দলের নেতা জিল্লুর রহমান জানান, সাংবাদিকতার নামে রনি সহ আরো বেশ কয়েকজন মাটি কাটার ঘটনায় চাঁদা দাবী করে। শুধু তাই নয় মোবাইলে আমার কাছে চাঁদার টাকা চাইলে দিতে অস্বীকার করায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আর চাঁদার টাকা না দিলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এই স্বাধীন দেশে তারা নামধারী সাংবাদিক সেজে চাঁদাবাজি করছে। শুধু তাই নয় তারা সম্প্রতি ধনবাড়ী উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হাসান তালুকদারের কাছে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে জোরপূর্বক টাকা চেয়ে তাদের পরবর্তী সময়ের জন্য জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে মূল্য নির্ধারণ করে আসে। এবং কী ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক ভিপি তার নিজ জমিতে পুকুর কাটার সময় চাঁদা দাবী করে। চাঁদার টাকা না দেয়ার কারণে মাটি কাটায় তারা বাঁধা প্রধান করেন।
ধনবাড়ী উপজেলা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এস এম হাসান তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, ইতি পূর্বে ধনবাড়ী উপজেলায় এরকম আচারণের কোন সাংবাদিক দেখেনি। হঠাত করেই বড় একটি ক্যামেরা হাতে নিয়ে এসে আমার অফিসের একটা অনুষ্ঠানে আসে। ছোট দাড়ী আওয়ালা তিনি শাহ পরানুল ইসলাম রনি পরিচয় দিয়ে তিন অনুষ্ঠানের খবর প্রচারের কথা বলে টাকা দাবী করেন। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বাজেট না থাকায় তাদের কে চা খাওয়ার জন্য আমার নিজের পকেট থেকে চারশ টাকা সম্মানী দেই। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে আমরা দুই চারশ টাকার সাংবাদিক না বলে বেশী টাকা দাবী করে কথা কাটাকাটি করে। পরে অফিস থেকে চলে যাওয়ার সময় তারা বলেন আমাদের প্রত্যেকের জন্য এক হাজার করে টাকা রাখবেন বলে চলে আসে। এরা কেমন সাংবাদিক তা আমার মাথায় আসে না!
ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক ভিপি সাংবাদিকদের জানান, রনি ও সোহান সহ ওদরে একটি গ্রæপ আছে বিগত আ’লীগ আমলে আমার ব্যাক্তিগত জমিতে পুকুর খননের সময় তারা গিয়ে বাঁধা প্রদান করে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেছিলো। এরা ফেসবুক ও ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েটর। এরা সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে। ধনবাড়ীতে এরকম চাঁদাজ নামধারী সাংবাদিক সমাজের কোনদিন কল্যাণ বয়ে আনবে না।
ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যক্ষ এম আজিজুর রহমান জানান, আমাদের পৌরসভার আমনগ্রাম গ্রামের এক ব্যাক্তি তার নিজ জমিতে মাটি কাটছে, সেখানে গিয়ে এরা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবী করে।আবার ফোনে চাঁদার টাকা চেয়েছে না দেয়ার কারণে গালিগালাজ করেছে। এ কেমন সাংবাদিকতা! এটা তো অপসাংবাদিকতা। এদের কে তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসহার আবু সাঈদ সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিকরা হচ্ছে সমাজের দর্পণ, তবে যারা চাঁদাবাজি করে তারা
সাংবাদিক হতে পারে না। উক্ত ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। চাঁদাবাজি এটা ফৌজাধারী অপরাধ। সরকারী কর্মকর্তা বা সাংবাদিক যে কেউ হোক না কেন আমরা প্রশাসন কোন অবস্থাতেই তা পশ্রয় দেয়ার সুযোগ নেই। চাঁদাবাজ দূর্নীতিতে আমার জিরোটলারেন্সে কাজ করছি। চাঁদা বাজির সাথে সর্ম্পৃক্ত তাদের কে আইনের আওতায় আনার জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীদের কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ধনবাড়ী সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন রাহাত সাংবাদিকদের জানান, উক্ত ঘটনায় ভোক্তভূগী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি, মাদকসহ অপরাধ কর্মকান্ড নির্মূলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করছে। এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করছে।
দৈনিক খোলা কাগজ অফিস জানান ,শাহ পরানুল ইসলাম রণি আমাদের কোন প্রতিনিধি না , তাকে আমরা নিয়োগ দেয়নি , কোন কার্ডও দেয়নি , যে উপজেলায় প্রতিনিধি নাই সে উপজেলা থেকে যে কেউ নিউজ পাঠাতে পারে । কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দ্বায় প্রতিষ্ঠান নেব না।
উল্লেখ্য, ধনবাড়ীতে শাহ পরানুল ইসলাম রণি ও ইমাম হাসান সোহানের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চলাচ্ছে অবাধে চাঁদাবাজি। তারা অভিনব কায়দায় চাদাবাজী করে কখনো পিকনিক করার কথা বলে টাকা আদায় করে ,কখনো ভ্রমনে যাওয়ার কথা বলে টাকা আদায় করে । বিভিন্ন কৃষি জমি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , বিভিন্ন ইটভাটা , দোকানপাট , সরকারি দপ্তরসমূহ , বিভিন্ন ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল,ক্লিনিক , এমন কোন যায়গা নেই যেখানে তারা চাঁদাবাজি করে নাই , তাদের কারনে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ , ঠিক মত ব্যবসা বানিজ্য করতে পারতেছে না । তাদের কথামতো চাদা না দিলে লাইভ দিয়ে মানহানির চেষ্টার অনেক অভিযোগ রয়েছে এই কথিত দুই সাংবাদিক এর বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিক একাধিক ব্যাক্তি জানান, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন । প্রতিবাদ করলে হেনস্থার স্বীকার হতে হয়। ক্ষমতাসীনদের সাথে চলায় ভয়ে কেউ মুখ খুলে না।
এলাকাবাসী জানান, আগে এই শাহ পরানুল রনি উপজেলা চ্যায়ারম্যান হীরার লোক বলে বিভিন্ন যায়গায় চাদাবাজী করতো কেউ কিছু বলার সাহস পায় নাই এখন ৫ আগস্টের পর আবার কোন অদৃশ্যছায়ায় এসব কাজ করে যাচ্ছে তা আমরা বলতে পারি না , তবে আমরা তার দ্রুত শাস্তির দাবী জানাচ্ছি ,
চাঁদার অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিক পরিচয়ধারী শাহ পরানুল ইসলাম রণি ও ইমাম হাসান সোহানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ধনবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো: শহিদুল্লা সাংবাদিকদের জানান, দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।