মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে অধীন গভীর নলকূপ বসাতে অতিরিক্ত ঘুষ ও দূর্নীতির অভিযোগ
মোঃ রনি আহমেদ রাজু, ক্রাইম রিপোর্টার:
মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন গভীর নলকুপ বসাতে প্রথমে ঘুষ ও পরে নলকুপ গ্রহিতাকে বিভিন্ন ভাবে আরও ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয় গচ্ছা স্বরূপ, এমনটাই অভিযোগে উঠে এসেছে। মাগুরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অর্থায়নে শ্রীপুরের আমলসার গ্রামের আশরাফুল মণ্ডলএর বাড়িতে বসানো হয় গভীর নলকূপ। তিনি বলেন, শুকনো মৌসুমে আমার বাড়ির নলকূপে পানি না ওঠায় আমি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে একটি গভীর নলকূপের আবেদন করি ও বরাদ্দ পায়। নিয়ম অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার কথা কিন্তু অফিসটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাপাচাপিতে তাকে ১০ হাজার ৭০০ টাকা জমা দিতে হয়। এরপর ঠিকাদারের নেতৃত্বে শ্রমিকরা আমার বাড়িতে গভীর নলকূপ বসাতে আসেন। তারপর যা শুরু হয় তার জন্য আমি আশরাফুল মণ্ডল মোটও প্রস্তুত ছিলাম না, আক্ষেপ করে তিনি শিক্ষা তথ্য টেলিভিশনকে কে বলেন, নলকূপ বসাতে এসে শ্রমিকরা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন। প্রথম দিকে সাতজন শ্রমিককে টানা ছয়দিন তিনবেলা খাবার খাওয়াতে হয়। পরে পাঁচ শ্রমিককে একবেলা খাওয়া ও ১৫০০ টাকা বকশিশ দিতে হয়। মানুষ খাবার খেতে চাইলে লজ্জার কারণে মানাও করা যায় না। তাদের খাওয়া ও বকশিশ বাবদ খরচ হয়েছে আরও ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে আমার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকারও বেশি। এমনই বর্ণনা দেন আশরাফুল মন্ডল। একই উপজেলার আড়ুয়াকান্দী গ্রামের আফজাল হোসেন ও গভীর নলকূপের বরাদ্দ পেয়েছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের খাওয়া ও বকশিশ বাবদ তার আরও ৮ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন,১০ হাজার টাকার নলকূপ বসাতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। নলকূপ থেকে বের হওয়া পানি দুর্গন্ধের কারণে ব্যবহার করতেও পারছি না। কাজের মান ও নির্মাণ সামগ্রীও ছিল খুবই নিম্নমানের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মাগুরা সদর, শ্রীপুর, মুহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প’র আওতায় ৬৬টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী সরকারিভাবে ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার মাধ্যমে নলকূপের বরাদ্দ পাওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, দপ্তরটির কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আবেদনের সময় ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দিতে হয়। এরপর শ্রমিকদের খাওয়া-বকশিশ বাবদ খরচ হয় আরও অন্তত ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকার নলকূপ বসাতে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। বিষয়টি নিয়ে সংস্থাটির জেলা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে জনস্বাস্থ্যের জেলা পর্যায়ের এই কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের পরামর্শ দেন, এই অফিসার এসে মাগুরাতে সবাইকেই এভাবেই আই ওয়াশ করে যাচ্ছে। লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরান মাহমুদ অমির যোগসাজশে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক রাজু আহমেদ প্রতিটি নলকূপের আবেদনকারীর কাছ থেকে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেন। এ ছাড়া বিগত সময়ের সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের আমলে বরাদ্দ দেওয়া নলকূপ নিয়েও ওই দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি করেছিলেন বলে দাবি করা হয়। অভিযোগের বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরান মাহমুদ অমি বলেন,গভীর নলকূপ বাবদ ১০ হাজার টাকার বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুরুর দিকে ঠিকাদার আমাদের না জানিয়ে নিম্নমানের কিছু কাজ করেছিল। খবর পেয়ে আমরা তাদেরকে মৌখিকভাবে নোটিশ দিয়েছি। শিগগিরই লিখিত নোটিশ দেওয়া হবে। আমরা এরই মধ্যে নিম্নমানের কাজগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। শ্রমিকদের খাবার দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১০ হাজার টাকা ছাড়া অন্য কোনো খরচের নিয়ম নেই। এ ছাড়া শ্রমিকদের খাবারের পেছনে এত অর্থ ব্যয় হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নাই। এ বিষয়ে কেউ কখনো আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেননি। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাখী ব্যানার্জী বলেন, আমি আসার পর কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে যে কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে সেটি যদি আমার এখতিয়ারের মধ্যে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লিখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম লিখিত অভিযোগ দিয়ে থাকেন। নলকূপ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের পরামর্শ দেন। এই জনসাস্থ্যের অফিসার কে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের কথা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি তো কিছু বলেই না অফিসে আসলেই বলে বাইরে আমার প্রোগ্রাম আছে আমি দ্রুত বের হচ্ছি। জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী এই অফিসারের অ্যাটিটিউড দেখে মনে হয় এইটা উনার নিজের পারিবারিক অফিস। উনার কাছে যে কেউ কিছু জানতে গেলে মনে হয় যে উনার পাকা ধানে কেউ মই দিয়েছে এমনটাই আচরণ করেন সার্বক্ষণিক।