শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রাস্তার কাজ না করে টাকা ভাগাভাগি( সওজ) ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে রূপগঞ্জে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্বজনদের সংবাদ সম্মেলন মাগুরা গোপালগ্রাম ইউনিয়ন কৃষকদলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এ্যাডভোকেট মিথুন রায় চৌধুরী পটুয়াখালী ভার্সিটির, পোস্টগ্রাজুয়েট স্ট্যাডিজ কমিটির সভা।। দুস্থ ও অসহায় মানুষের ভরসা যেন ঝর্ণা মান্নান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট সাপাহারে জোর পূর্বক লক্ষাধিক টাকার মাছ উত্তোলন পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায়, মসজিদের ইমামের গরু লুট।। দুমকি উপজেলায়, গরু লুঠ মামলার ২ আসামি আটক শ্রীনগর থানা থেকে যুবদল নেতাকে ছিনিয়ে নিলো বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নওগাঁর মান্দায় ভূমিহীন কৃষকদের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ
Headline
Wellcome to our website...
এবার হজ্বে করোনার জন্য বিশ্ববাসীর জন্য দোওয়া কমনা
/ ২ Time View
আপডেট : মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১, ৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

 

মহামারি থেকে মুক্তির প্রার্থনা

লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক

সমকাল প্রতিবেদক

সোমবার আরাফাতের ময়দানে নামাজ শেষে মোনাজাত করছেন হাজিরা- 	 এএফপি

সোমবার আরাফাতের ময়দানে নামাজ শেষে মোনাজাত করছেন হাজিরা- এএফপি

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছান হজের সময়, বিশেষ
করে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কার অদূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে
অবস্থানকালে। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজের দিনে এখানে সমবেত হাজিরা হৃদয়ের
গহিন থেকে উচ্চারণ করেন ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বা আমি হাজির, হে
আল্লাহ আমি হাজির। শুভ্র পোশাকের হাজিদের এই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয় বিশ্বের
শতকোটি মুসলিমের কণ্ঠে। গতকাল সোমবার এই ময়দানে আবারও ধ্বনিত হয়েছে এই
সমধুর বাণী। তবে মহামারির কারণে দ্বিতীয়বারের মতো এবারও সীমিত সংখ্যক হাজি
ছিলেন এই ময়দানে। তাদের উপস্থিতিতেই এদিন পালিত হয় পবিত্র হজ।
মাস্ক পরা হাজিরা এ সময় মহামারি থেকে বিশ্বকে মুক্ত করার জন্য অশ্রুভেজা
কণ্ঠে মহান আল্লাহর কাছে কাতর প্রার্থনা করেছেন। করোনাভাইরাস আরাফাত ময়দানে
সমবেত অনেক হাজির প্রিয়জনকেও কেড়ে নিয়েছে। মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে এসে
তাই তারা সেই স্বজনদের রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেছেন।
পাশাপাশি বলেছেন, ‘হে প্রভু, আপনি এই মুসিবত থেকে মানবজাতিকে নাজাত দিন।’
দুই বছর আগেও সারাবিশ্ব থেকে হজে আসা লাখ লাখ হাজির কণ্ঠে ‘লাব্বাইক’
ধ্বনিতে আরাফাত ময়দান মুখর হতো। মহামারি করোনার কারণে এবার সৌদিতে
অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের মাত্র ৬০ হাজার নাগরিক হজে অংশ নিয়েছেন। হজ পালনের
মূল আনুষ্ঠানিকতা হয় আরাফাতের ময়দানে। এখানে মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের
খুতবা দেওয়া হয়। এবার খুতবা পাঠ করেছেন মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব
শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। এ খুতবা এবার বাংলা, উর্দু, চীনা,
তুর্কি, মালয়, রুশ, ফরাসিসহ ১০টি ভাষায় অনূদিত হয়।
আরাফাত ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। মাঝে দুই মাইল দৈর্ঘ্য ও দুই মাইল
প্রস্থের এই সমতল ভূমি। প্রায় ১৪০০ বছর আগে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)
এখানে জাবালে রহমত পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ
দিয়েছিলেন। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলেন। জাবালে রহমত হলো রহমতের পাহাড়।
ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন স্মরণ করিয়ে দেয় আদি
পিতা হজরত আদম (আ.) ও আদি মাতা হজরত হাওয়ার (আ.) পুনর্মিলনের ঘটনাকে।
গত বছরের মতো এ বছরও সৌদি আরবের বাইরের কোনো দেশ থেকে হজে অংশগ্রহণ করতে
পারেননি হজযাত্রীরা। যারা করোনার টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন, শুধু তারাই হজ
পালনের সুযোগ পেয়েছেন।
খুতবায় আবদুল আজিজ বালিলা বলেন, মুসলমানদের আল্লাহকে ভয় আর তাদের নির্দেশ
পালন করতে হবে। তাহলেই ইহকাল ও পরকালে সফলতা আসবে। তিনি বলেন, দুর্দিনেই
ইমানদাররা আল্লাহর কাছে আসার সুযোগ পান। পার্থিব এই জীবনে দুঃখ-কষ্ট
থাকবেই। বিপদে ধৈর্য ধরলে আল্লাহপাক জান্নাত দান করবেন, যেখানে কোনো
দুঃখ-কষ্ট নেই। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) মহামারির সময় এক স্থান থেকে আরেক
স্থানে যেতে নিষেধ করেছেন। এ কারণেই সৌদি সরকার এবার হাজির সংখ্যা সীমিত
রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার আরাফার দিন বিশ্বে অসংখ্য মুসলিম রোজা পালন করেছেন। যারা হজে যেতে
পারেননি, তাদের জন্য এদিন রোজা রাখা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। হজের সময় শিয়া,
সুন্নি, আরব-অনারব কোনো ভেদাভেদ থাকে না। সবাই এক কাতারে চলে আসেন।
গতকাল সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে মহান আল্লাহর
জিকিরে মশগুল ছিলেন হাজিরা। আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর এক আজান ও দুই
ইকামতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন হাজিরা। হাজিরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত
আরাফাতে অবস্থানের পর মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন। রাতে
সেখানেই অবস্থান করেন। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য সেখান
থেকে প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করেন।
আরাফাতের ময়দানে ভারতীয় নাগরিক করিমুল্লাহ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন,
তিনি মহামারি থেকে মুক্তির জন্য মোনাজাত করেছেন। ভারত যেন এই দুর্যোগ
কাটিয়ে উঠতে পারে, সেই প্রার্থনাও করেছেন তিনি। সিরীয় হাজি মাহের বারুদি
বলেন, ‘আমি প্রথমেই এই মহামারি থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছি। সমগ্র
মুসলিম উম্মাহ ও মানবজাতি যেন এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়, সে জন্য মোনাজাত
করেছি। আগামী বছরগুলোতে এই ময়দান যেন লাখ লাখ হাজির আগমনে আবার পূর্ণ হয়ে
যায়, সেই দোয়া করেছি।’ ফিলিস্তিনি হাজি উম আহমেদ বলেন, ‘সমগ্র বিশ্ব এখন
কঠিন সময় পার করছে। আমি মোনাজাতে বলেছি, হে আল্লাহ আপনি এই দুঃসময় থেকে
মানবজাতিকে মুক্তি দিন।’ তিনি করোনাভাইরাসে তার পরিবারের চার সদস্যকে
হারিয়েছেন বলে জানান।
আজ মঙ্গলবার হাজিরা ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায়
ফিরবেন। মিনায় এসে বড় শয়তানের উদ্দেশে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করবেন, দমে শোকর
বা কোরবানি ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা
কাপড়ও বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মসজিদুল হারামে গিয়ে
কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। এ ছাড়া সাফা-মারওয়া সাঈ (সাতবার দৌড়াবেন)
করবেন। তাওয়াফ ও সাঈ শেষে তারা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত
দিন তিনটি (বড়, মধ্যম ও ছোট) শয়তানের উদ্দেশে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন।
এভাবেই হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর হজের দিন পবিত্র কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ পরানো
হয়। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার কাবায় নতুন গিলাফ পরানো হয়। তখন হাজিরা
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করছিলেন। আরাফাত থেকে ফিরে তারা কাবা শরিফের গায়ে
নতুন গিলাফ দেখতে পান। এই গিলাফ বা কিসওয়া তৈরিতে ব্যবহূত হয় কালো রঙের ৬৭০
কেজি খাঁটি রেশম। পুরোনো গিলাফকে টুকরা করে বিভিন্ন দেশের ইসলামিক বিশিষ্ট
ব্যক্তি ও রাষ্ট্রপ্রধানদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
এবারও কোনো হাজিকে কাবা শরিফ স্পর্শ করতে দেওয়া হবে না। যথাযথ দূরত্ব বজায়
রেখে তাওয়াফ, নামাজে অংশগ্রহণ, সাঈসহ হজের সব কার্যক্রম পালন করতে হবে।
নারী হাজিদের সহায়তায় নামিরা মসজিদ এবং আল মাশার আল হারাম মসজিদে নারীকর্মী
মোতায়েন করেছে সৌদি সরকার।
মহামারির আগে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হজ সম্পাদন করেছেন ২৫ লাখের বেশি মানুষ।
এটা ছিল বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত। হজ আয়োজনের মাধ্যমে সৌদি সরকার
বিপুল অর্থ আয় করত। এবারও হজে অংশগ্রহণের আবেদন করেছিলেন পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার
মানুষ। তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ৬০ হাজার
মানুষকে সুযোগ দেওয়া হয়। গত বছর হজ পালনের সুযোগ পান মাত্র এক হাজার মানুষ।
প্রায় ৯০ বছর আগে ১৯২৯ সালে হজ করেছিলেন ৬৬ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান। ১৯৩২
সালে সৌদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে কখনও হজ বাতিল করা হয়নি।
এবার কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হজের আয়োজন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস হজে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণকে স্বাগত
জানিয়েছেন। এবার এখন পর্যন্ত কোনো হাজির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি বলে
জানিয়েছে সৌদি গেজেট।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page