নিউজ ডেস্কঃ
রাজধানীর কুরবানির পশুর হাটগুলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ। এখনো দেশের
বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে ট্রাকে পশু আসছে। স্বল্প পরিসরে বেচাবিক্রি শুরু
হলেও এখনো জমে ওঠেনি। হাটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও পশুর দাম বেশি বলে
জানিয়েছেন তারা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল থেকে
শুরু হয়েছে কুরবানির হাট। চলবে ঈদের দিন পর্যন্ত।
ক্রেতারা বলছেন, বাজার মূল্য পর্যালোচনা করলে মনে হচ্ছে, গরুপ্রতি ১০
থেকে ১৫ হাজার টাকা দাম বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। তারা যে দাম হাঁকছেন,
সেখান থেকে আর কমাচ্ছেন না। পশু বিক্রির আগ্রহও তাদের অনেক কম। বিক্রেতারা
বলছেন, গরু পালন করা এখন অনেক ব্যয়বহুল। ধানের চেয়ে খড়ের দাম বেশি। একই
অবস্থা খৈল, ভুসিরও। এসব গরুর ঢাকার হাঁটে আনতেও গরু প্রতি প্রায় তিন থেকে
পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর একেকটা গরুর পেছনে দুই থেকে আড়াই বছর সময়
দিয়ে পালন করতে হয়েছে। এখন সেই বিনিয়োগ ও শ্রমের মূল্য যদি না মেলে তাহলে
তো গরু পালন করবে না মানুষ।
সরেজমিন হাটগুলোতে ঘুরে জানা গেছে, দেশীয় জাতের ছোট আকৃতির গরুগুলো ৬০
থেকে ৭৫ হাজার টাকা দাম বলছেন বিক্রেতারা। আর মাঝারিগুলো ৮০ থেকে ১ লাখ
টাকা এবং বড়গুলো এক লাখ ১০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে দুই
লাখ, তিন লাখ, পাঁচ লাখ, ১০ লাখ, ১৫ লাখ এবং ২০ লাখ টাকার কিছু গরুর
বাজারের উঠেছে। এগুলো দাম-দর পর্যায়ে রয়েছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গরুর
দাম কমবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিন আরও দেখা গেছে, রাজধানীর পশুর হাটগুলোর আশপাশে মারাত্মক যানজট।
এর মধ্যে গরু নিয়ে ছোটাছুটি চলছে। এ কারণে পশুর হাট এলাকার সড়কগুলোয় চলাচলে
সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাজধানী গাবতলী, বছিলা, হাজারীবাগ,
ইসলামবাগ, উত্তরা, কাওলা হাট ঘুরে শনিবার দেখা গেছে, মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হাটে চলাচলে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। যদিও
ইজারাদারদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের
পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা যাদের মুখে মাস্ক নেই, তাদের মাস্ক দিয়েছেন।
তবুও শেষমেশ মানুষের মুখে মাস্ক থাকছে না। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, প্রচণ্ড
গরমের মধ্যে তারা মুখে মাস্ক রাখতে পারছেন না। ধোলাইখাল, বছিলা, কাফরুল,
গাবতলী হাট সীমানা পেরিয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
মেহেরপুরের মুন্সীগঞ্জের বকুল আহমেদসহ কয়েকজন গাবতলী হাটে এসেছেন ১৭টি
গরু নিয়ে। তিনি বলেন, একটি ট্রাক ভাড়া করে তারা গরুগুলো নিয়ে এসেছেন। গরু
আনতে পথে তাদের কোনো চাঁদা পরিশোধ করতে হয়নি। তবে গোয়ালন্দ-আরিচার ঘাট হয়ে
পদ্মা পার হতে তাদের ৭ ঘণ্টার জ্যামে পড়তে হয়েছে। দীর্ঘ ভোগান্তির পর তাদের
গাবতলী হাটে পৌঁছাতে প্রতিটি গরুর পেছনে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা করে খরচ
হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ (শনিবার) সকালে গরু নিয়ে আমরা এসেছি। অনেক ক্রেতা এসেছেন।
তারা কম দাম বলছেন। আমাদের যেসব গরুর দাম গ্রামে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা
উঠেছে, ক্রেতারা সেগুলো ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা বলছেন। এখনো সময় আছে আশা করি
কাঙ্ক্ষিত দামে গরু বিক্রি করতে পারব।
যশোরের মনিরামপুরের মিম ডেইরি ফার্মের ছয়টি গরু আনা হয়েছে গাবতলী হাটে। এ
প্রতিষ্ঠানের একজন হাসিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের গরুগুলো বড় আকৃতির। সবচেয়ে
বড়টির দাম ১৫ লাখ টাকা। অন্যগুলো তিন থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে। দামদর
হচ্ছে, আশা করি ভালো দামে বিক্রি করতে পারব। ১৫ লাখ টাকার গরুটির নাম রাখা
হয়েছে ‘সুপার বস’।
উত্তরা ১৭ নম্বর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি গরুর পাশাপাশি
অনেক ছাগল ও মহিষ উঠেছে। স্বল্প পরিসরে বিক্রিও চলছে। কোথাও মানা হচ্ছে না
স্বাস্থ্যবিধি। গাদাগাদি করে মানুষ যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে হাটে। সামাজিক
দূরত্ব দূরের কথা, মাস্কের ব্যবহারও তেমন লক্ষ করা যায়নি। হাটে হাত ধোয়ার
ব্যবস্থাও অপ্রতুল দেখা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,
এ হাটে ৬০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু উঠেছে। ১০ হাজার থেকে ৪০
হাজার টাকা দামের কিছু ছাগলও উঠেছে। মহিষের দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে
দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।
ধোলাইখাল পশুর হাটে ৩০ মণ ওজনের গরুটির (কালা মানিক) দাম হাঁকা হচ্ছে ২০
লাখ টাকা। শনিবার ওই হাটে গরুটির নামও ছিল সবার মুখে মুখে। কালা মালিকের
মালিক তাইজুল বেপারি যুগান্তরকে বলেন, গরুটিকে নিজের সন্তানের মতো পরিশ্রম
করে বড় করেছি। গরুটির সঠিক দাম পাবেন বলে আশা তার।
দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা (শনিরআখড়া) এবং গোলাপবাগে ঢাকা দক্ষিণ
সিটি করপোরেশন মার্কেটের পেছনে খালি জায়গায় পশুর হাট জমতে শুরু করেছে। তবে
করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে পশুর হাটে কেনা-বেচার নির্দেশনা দিলেও সেসব মানা
হচ্ছে না। এ দুই হাট ঘুরে জানা গেছে, বড়, ছোট এবং মাঝারি সাইজের গরু এবং
ছাগলে এখন হাট ভরপুর। দুহাটে গরু উঠেছে ১২ হাজার এবং গোলাপবাগে পশু প্রায়
আট হাজার। গোলাপবাগে ২৫ মণ ওজনের একটি গরুর দাম ১২ লাখ টাকা হাঁকা হয়েছে।
ক্রেতারা সাত লাখ টাকা দাম বলেছেন। সারুলিয়া পশুর হাটে বিক্রি বেড়েছে।