চলতি বছর সংক্রমণের তীব্রতা অনেক বেশি
করোনায় দেশে টানা তিন দিন ধরে এক
শর বেশি করে মানুষ মারা যাচ্ছে। গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০২ জনের, যা এখন পর্যন্ত দেশে দৈনিক হিসাবে
সর্বোচ্চ মৃত্যু। আর নতুন শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৬৯৮ জন। এর আগে দুই দিন
১০১ জন করে মানুষ মারা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও
গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে গত শনিবার রাতে প্রকাশিত এক গবেষণা
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে
দেশে সংক্রমণের তীব্রতা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে বয়স্ক বা আগে থেকে
বিভিন্ন রোগে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা মানুষ এই তীব্রতার ধকল সইতে পারছে না
বলেই মৃত্যু বেড়ে গেছে।
যদিও সংক্রমণের তীব্রতা ও দ্রুত মৃত্যুর
কারণ সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য দিতে পারছে না আইইডিসিআর। শুধু আগের মতোই
পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের আগে থেকে নানা
রোগের জটিলতা রয়েছে এবং যাদের বয়স তুলনামূলক বেশি, তাদের মধ্যে যারা করোনায়
আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্য থেকেই মৃত্যু হচ্ছে বেশি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে
বেশি রোগী মারা যাচ্ছে তীব্র শ্বাসকষ্টে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চ
রক্তচাপও তাদের মৃত্যু ত্বরান্বিত করছে।
আফ্রিকান বা অন্য কোনো ভেরিয়েন্টের কারণে
এবার সংক্রমণের তীব্রতা ও মৃত্যু দ্রুত ঘটছে কি না, এ বিষয়ে আইইডিসিআরের
পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমীনা শিরীন বলেন, ‘আমাদের কাছে এ রকম কোনো নিশ্চিত
তথ্য এখনো নেই। এ জন্য যে মাপের গবেষণা প্রযুক্তি দরকার, তা আমাদের এখানে
নেই। আর এটি বের করা অনেকটাই সময়সাপেক্ষ। ফলে উপযুক্ত মাত্রায় গবেষণার
ফলাফল ছাড়া কেউ যদি বলেন কোনো বিশেষ ভেরিয়েন্টের প্রভাবে সংক্রমণের তীব্রতা
বেড়েছে বা দ্রুত মৃত্যু ঘটছে, সেটা সঠিক হবে না বা হচ্ছে না।’
প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত মার্চ মাসে (এক
মাসে) যেখানে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬৩৮ জনের, সেখানে চলতি এপ্রিল মাসে মাত্র
১৫ দিনে মারা গেছে ৯৪১ জন। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা
বৃদ্ধির হার ৩২.২ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছর দেশে ২৪ ঘণ্টার হিসাবে যেখানে
সর্বোচ্চ মৃত্যু উঠেছিল ৬৪ জনে, সেখানে এবার এই এপ্রিলের কয়েক দিনই দৈনিক
মৃত্যু গত বছরের ওই সর্বোচ্চ দৈনিক মৃত্যুর চেয়ে ৫০ শতাংশেরও বেশি হচ্ছে। এ
ছাড়া এবার যারা মারা যাচ্ছে তাদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মৃতদের
মধ্যে সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই
হাসপাতালে এসেছিল, আবার সর্বোচ্চ ৪৮ শতাংশ হাসপাতালে আসার পাঁচ দিনের কম
সময়ের মধ্যে মারা গেছে। তবে সরাসরি উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে
মৃত্যুর হার মাত্র ১০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর থেকে
সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশের মৃত্যু ঘটছে পাঁচ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এবং ২৬ শতাংশের
মৃত্যু ঘটছে ২০ দিন পরে।
আইইডিসিআরের ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়,
মৃতদের মধ্যে পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালে এসেছিল ২৬ শতাংশ, ১১ থেকে
১৫ দিনের মধ্যে এসেছিল ১২ শতাংশ, ১৬ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ২ শতাংশ এবং ২০
দিনের পরে এসেছিল ৮ শতাংশ। অন্যদিকে হাসপাতালে আসার পর ৩১ শতাংশের মৃত্যু
হয়েছে পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে, ১২ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে ১১ থেকে ১৫ দিনের
মধ্যে, ২ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে ১৬ থেকে ২০ দিনের মধ্যে এবং ৬ শতাংশের
মৃত্যু হয়েছে ২০ দিনের পরে।
ওই প্রতিবেদনের আরেক অংশে দেখানো হয়েছে, এ
বছর ২৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত যারা আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে
তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৪ শতাংশই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে,
বাকিদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে, ১৭ শতাংশ বাড়িতে এবং ৬
শতাংশ অন্যান্যভাবে চিকিৎসা নিয়েছে। এ ছাড়া এবার মৃতদের মধ্যে
তুলনামূলকভাবে নারীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে গত বছর জুলাই মসে যখন
সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল দেশে, তখন ৮২ শতাংশ ছিল পুরুষ এবং বাকি ১৮ শতাংশ
ছিল নারী। এবার এপ্রিলে এ পর্যন্ত যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ
পুরুষ এবং ৩০ শতাংশ নারী। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় নারীর মৃত্যু এবার ১২
শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে,
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসাবে মৃত্যু হয়েছে ১০২ জনের, নতুন শনাক্ত হয়েছে তিন
হাজার ৬৯৮ জন এবং সুস্থ হয়েছে ছয় হাজার ১২১ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট
শনাক্ত সাত লাখ ১৮ হাজার ৯৫০ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১০ হাজার ৩৮৫ জন এবং
সুস্থ হয়েছে ছয় লাখ ১৪ হাজার ৯৩৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুহার ১৯ শতাংশ। ২৪
ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ জন এবং নারী ৪৩ জন। বয়স বিবেচনায় ৩১ থেকে ৪০
বছরের দুজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৪ জন, ৫১ থেকে ৫০ বছরের ২৩ জন এবং ষাটোর্ধ্ব
৬৩ জন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৬৮ জন, চট্টগ্রামের ২২ জন, রাজশাহীর
তিনজন, খুলনার একজন, বরিশাল ও ময়মনসিংহের চারজন করে রয়েছে।