বরখাস্ত সাইবার সিকিউরিটির প্রধান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সির (সিআইএসএ) প্রধান ক্রিস ক্রেবসকে বরখাস্ত করেছেন। ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে ক্রেবসকে বরখাস্ত করেন।
সিআইএসএর পক্ষ থেকে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনকে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সুরক্ষিত নির্বাচন’ বলে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল।
নির্বাচনে কোনো ভোট মুছে যাওয়া, বাতিল হওয়া বা অন্য কোনো ধরনের জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে বলা হয়েছিল।
সিআইএসএর পক্ষ থেকে এমন বিবৃতি আসায় ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হন। মঙ্গলবার রাতে ক্রেবসকে বহিষ্কারের কথা জানিয়ে ট্রাম্প আবার তাঁর টুইট বার্তায় দাবি করেন, ভোটে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে।
ট্রাম্পের এমন দাবি সত্ত্বেও ভোট নিয়ে তাঁর আরেকটি মামলা বাতিল হয়েছে। পেনসিলভানিয়ার সুপ্রিম কোর্টে মঙ্গলবার ট্রাম্পের মামলা বাতিল হয়। এই মামলায় ট্রাম্প শিবির থেকে দাবি করা হয়েছিল, ফিলাডেলফিয়ার ভোট গণনায় রিপাবলিকানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আদালত তার কোনো প্রমাণ পায়নি বলে নির্দেশে বলেছেন।
ওয়াশিংটনের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজ শহর থেকে তাঁর প্রশাসনের জন্য কর্মকর্তাদের নাম ঘোষণা করছেন।
আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়ার কথা। কিন্তু ট্রাম্প এখনো পরাজয় না মানায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
বাইডেনকে ১৭ নভেম্বর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ব্রিফ করেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের অপেক্ষার এই সময়ে প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিদিনের তথ্য তাঁর পাওয়ার কথা। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হচ্ছে না।
বাইডেন শিবির থেকে এ নিয়ে ২০০০ সালের উদাহরণ টেনে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হচ্ছে। ৯/১১ কমিশন এই ধরনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল।
২০০০ সালে আল গোর ও জর্জ বুশের নির্বাচনী লড়াইয়ের ফল আইনি ঝামেলায় ঝুলে থাকার কারণে আল–কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পরিকল্পনা কার্যকর করতে পেরেছিল বলে কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল।
ডেমোক্র্যাট সিনেটর পেটি মারেই বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন দেশের নিরাপত্তাকেই শুধু হুমকির মুখে ফেলছে, এমন নয়। আমেরিকার জনস্বাস্থ্যকেও চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
এক দিন আগে বাইডেন নিজেও বলেছেন, ট্রাম্প সাবলীলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে সহযোগিতা না করায় আমেরিকায় বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফার ঢেউ চলছে। দেশটিতে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। প্রায় আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন মৃত্যুর তালিকায় গড়ে ১ হাজার মানুষের নাম যুক্ত হচ্ছে।
মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিগগিরই টিকার অনুমোদন দেওয়ার কথা। এমন অনুমোদন ডিসেম্বরের মধ্য নাগাদ চলে আসতে পারে।
টিকা দ্রুত সর্বত্র পৌঁছানো ও জনগণের কাছে তার ব্যবহার নিশ্চিত করা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষমতার পরিবর্তন নিয়ে ট্রাম্পের টালবাহানায় করোনা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আমেরিকার শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা দেশজুড়ে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশালী এক আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের পুরো শাসন আমল নিয়ে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
নিউ জার্সি থেকে নির্বাচিত প্রবীণ ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান বিল প্যাস্ক্রেল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বাইডেন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগেই ট্রাম্পের পুরো শাসনামল নিয়ে তদন্ত করার জন্য মার্কিন বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের অপরাধ ও সাংবিধানিক বিষয় নিয়ে অপরাধমূলক চেষ্টা প্রতিহত করার জন্য এমন তদন্ত প্রয়োজন বলে কংগ্রেসম্যান প্যাস্ক্রেল তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন।
বাইডেন ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যে তাঁর নিজের শহরে অবস্থান করছেন। নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ওয়াশিংটন থেকে ট্রানজিশন নিয়ে পরামর্শে যোগ দিচ্ছেন। মঙ্গলবারে তাঁদের প্রশাসনে যোগ দেবেন—এমন কিছু কর্মকর্তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে বাইডেন প্রশাসন যে ভিন্ন হবে, তা আগেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। ট্রাম্পের প্রশাসনে শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের প্রাধান্য। বাইডেন তাঁর প্রশাসন কৃষ্ণাঙ্গ ও নারীদের মিশ্রণে সাজাচ্ছেন বলেই দেখা যাচ্ছে।